“ঝুমুর: লোক জীবনের প্রতিচ্ছবি” লিখলেন- অ রূ প মা হা ত

0
248
পরিচিতিঃ অরূপ বেশ কিছুকাল যাবৎ বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন সহ নানান পত্রিকায় লেখালিখি করছেন। বহু সামাজিক কাজ ও সমাজ সংগঠনে নিয়োজিত একটা প্রাণ। তিতকি পত্রিকার সহসম্পাদকের পদ অলংকৃত করছেন। কবিতা লিখতেই তিনি বেশি আগ্রহী। কিন্তু আজ বাইফোকালিজম্-র পাতায় লিখলেন একটি দলিল

 

ঝুমুর: লোক জীবনের প্রতিচ্ছবি

অ রূ প   মা হা ত

ঘামে ভিজা কালঅ গায়ে
আর পিয়া নাচে নপুর পায়ে
তা দেইখ্যে হামার জুড়ায় এ জীবঅন, জীবন গো

আইজ ঝুমোইরে মাতঞেছে হামার মন।

ফাঁক পালে চাষের কাইজে
ঢোল ধমসা মাদোইল বাজে
আর মহকে উঠে এ পড়া যৌবঅন, যৌবন গো

আইজ ঝুমোইরে মাতঞেছে হামার মন।

আর যত গোপন কথা ছিল,
মনের যত ব্যথা ছিল
সব জানে এ শাল বঅন, বন গো

বলি আইজ ঝুমোইরে মাতঞেছে হামার মন।

বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনজাতি। আর্যদের আগমনের বহু আগের থেকে বসবাসকারী এই আদি জনগোষ্ঠী ভারতবর্ষের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁরা নিজেদের সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগ, আশা-আকাঙ্খা, প্রেম-বিচ্ছেদ প্রভৃতির অনুভূতি তুলে ধরতে গান বাঁধেন, মেতে থাকেন লোকনৃত্যে।

পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা আদিবাসী উপজাতি কুড়মি সম্প্রদায়ের প্রাণের গান “ঝুমুর।” ঝুমুরের মাধ্যমেই ভাবপ্রকাশ ঘটে যাবতীয় অনুভূতির। কৃষিজীবী কুড়মি ভাইবোনেরা সারাদিনের ক্লান্তি ধুয়ে ফেলতে বেছে নেয় ঝুমুরকে। তাইতো জমিতে লাঙল করতে থাকা কৃষক ভাই, খাবার পৌঁছাতে আসা স্ত্রীর অপেক্ষায় গুনগুন করে গেয়ে ওঠেন-
“এগো হালঅ চালালি
আর আইড়অ কদলালি,
তর বাইসামে কিসে দেরি গো
ও বাবুর মাঞ্,
বেলাটা ঘুরালি”
ঠিক এভাবেই জীবনের প্রতিটি পলে ঝুমুর তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। সমগ্র জঙ্গলমহলের পিছিয়ে পড়া পাথর খাদানে কাজ করা, বন থেকে পাতা তুলে আনা, রুখা সুখা মাটিতে চাষের কাজ করা শ্রমশীল কৃষিজীবী প্রান্তিক মানুষগুলোর সুখ, দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, রাগ, অভিমান, ভালোবাসা, জ্বালা, যন্ত্রণা বহিঃপ্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠে এই ঝুমুর সঙ্গীত। ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী কুড়মি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের সমস্ত উৎসবেই ঝুমুর গানের একটি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। করম পরব, বাঁদনা পরব, মকর পরব ছাড়াও অন্যান্য ব্যক্তিগত পারিবারিক অনুষ্ঠানেও ঝুমুর গানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি সামাজিক অনুষ্ঠানেই ধমসার গুড়গুড়ানি ও ঢোলের তালের সাথে মাদলের বোল মিলেমিশে এক এক মায়াবী সঙ্গীতমূর্ছনার জন্ম দেয়। এক অপূর্ব সুরের মায়াজালে মেতে থাকেন আপামর জনসম্প্রদায়।

বহুপ্রাচীন কাল হতে লোকের মুখে মুখে পরিবেশিত হওয়া এই ঝুমুর সঙ্গীতের প্রায় আঠারোটি ভাগ রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও বহুল প্রচলিত কয়েকটি ভাগ হল- ভাদরিয়া, দরবারিয়া, আষাড়িয়া, ডাঁড়শালিয়া, খেমতালি, চৈতালি, ছৌআলি প্রভৃতি। দরবারিয়া ঝুমুর অন্যান্যদের তুলনায় নতুন। তবে বর্তমানে ঝুমুর সঙ্গীতে মুলত ভাদরিয়া ও দরবারিয়া ধারার প্রাধান্য প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়। এই দুই ধারার একজন উল্লেখযোগ্য শিল্পী হিসেবে দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে কাজ করে চলেছেন পুরুলিয়ার গোবিন্দ লাল মাহাত। বিভিন্ন সময়ে যে সমস্ত শিল্পীবৃন্দ ঝুমুর গানকে দেশের মানচিত্রে উজ্জ্বল ভাবে প্রতীয়মান করে তোলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- বিজয় মাহাত, পরমেশ্বর মাহাত, প্রেমকুমার, মিনুরানী মাহাত, লক্ষ্মীকান্ত মাহাত, ইন্দ্রাণী মাহাত, পূর্ণিমা মাহাত, অঞ্জলি মাহাত, অজিত মাহাত, সুভাষ কুইরি, সলাবত মাহাত, লালজী মাহাত, হারাধন মাহাত, রামকৃষ্ণ মাহাত, শঙ্কর তন্তুবায়, ভোলানাথ মাহাত, বিদ্যাধর কর্মকার, লক্ষ্মীকান্ত মাঝি, মহাদেব যোগী প্রমুখ। এই ঝুমুর গানকে বৃহত্তর পরিসরে জনপ্রিয় করে তুলতে আরও বেশ কিছু মানুষ পর্দার আড়ালে থেকে নিরলসভাবে ভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন। শিল্পীদের বিভিন্ন জনপ্রিয় গান যা জনসমাজে আলোড়ন ফেলে তার সৃষ্টি কর্তারা কিন্তু আড়ালে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। ঝুমুর সঙ্গীতের তেমনই কয়েকজন রচয়িতা হলেন- ভবপ্রীতানন্দ ওঝা, উদয় কর্মকার, ললিতমোহন মাহাত, সন্তোষ মাহাত, সুনীল মাহাত, ভবতোষ শতপথি, ধনঞ্জয় মান্না, দিলীপ পাত্র, তমাল মাহাত, সুভাষ মাহাত, সনৎ চন্দ্র মাহাত, গিরিধারী সহিস, কৃত্তিবাস কর্মকার, রাখহরি মাহাত প্রমুখ। আবার বহুক্ষেত্রে শিল্পীরা নিজেরাই গান বাঁধেন। তেমনই কয়েকজন ঝুমুর শিল্পী হলেন- সলাবত মাহাত, গোবিন্দ লাল মাহাত, লালজী মাহাত, কিশোর গুপ্ত, রামকৃষ্ণ মাহাত প্রমুখ। এছাড়াও এই সঙ্গীতের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বাদকগণ। ঝুমুর সঙ্গীতের মায়াবী সুরমুর্ছনা মুলত নির্ভর করে ঢোলবাদক, মাদলবাদক ও ধমসাবাদকের ওপর। বর্তমানে এই লোকসঙ্গীত ক্যাসেটবন্দী হয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও ১৯৭০-এর দশকে তৎকালীন শিল্পীদের বিভিন্ন প্রতিকুলতার মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করতে হত। এক সময় তাঁরা সাইকেলে করে বিভিন্ন অঞ্চলে গান শোনাতে যেতেন। পরবর্তীকালে ঝুমুর সম্রাট বিজয় মাহাত তাঁর সুরের জাদুতে এই গানকে এক অনন্য পর্যায়ে তুলে নিয়ে যান। বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পায় এই অতি প্রাচীন লোকসঙ্গীতটি।

নব্বইয়ের দশকে ঝুমুর গানে লৌকিকতার অনুপ্রবেশ ঘটে। এই সময় গানের কথা মূলত সমাজের দৈনন্দিন ক্রিয়াকর্মের অংশ বিশেষ নিয়ে গড়ে উঠেছিল। দেশ-বিদেশে জনপ্রিয় ঝুমুর শিল্পী বিজয় মাহাতর কন্ঠে –
ডাইল ভাতে সারাপ সুরুপ মাছ ভাতে কাঁটা গো
বড় বহুকে দিলা সিঁধুর ছোট বহুকে ঝাঁটা গো
ছোট বহুকে ঝাঁটা।

ঝাড়গাঁর হাট যাতে, বিহানে ধরিল হাতে।
আবার লক্ষ্মীকান্ত মাহাত ও ইন্দ্রাণী মাহাতর যুগল কন্ঠে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছানো-
হাইর দিব বলেছিলি নাই দিলি কিনে
নাকফুলটাও হারাঞ গেল কলাবনীর বনে গো
কলাবনীর বনে।”
গানগুলি কুড়মি জনজাতির সেই সময়কার সমাজচিত্রকে পরিস্কার ভাবে পরিস্ফুট করে তোলে।

পরবর্তী কালে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে অঞ্জলি মাহাত এক অন্য ধারার ঝুমুর গানের মাধ্যমে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সামাজিক অনুষ্ঠানে গাওয়া “বিহাগীত” গুলোকে ঝুমুর গানের আঙ্গিকে মাদলের বোলের সাথে পরিবেশন করেন তিনি। এই সময় সুভাষ মাহাতর কথায় অঞ্জলি মাহাতর কন্ঠে কুড়মি সমাজের বিয়ের রীতিনীতি ঝুমুর গানের প্রধান উপজীব্য বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।
এত দিন যে রাখলি মাইগো
ওগো ওমা দুধু ভাতু দিইঞে
বা
মাই কাঁদে মসি কাঁদে কুলহি মুড়ায় আসঞে রে
তুই কেনে কাঁদিস বহিন হামি যাব সঁগে রে।”
– গানগুলিতে বিবাহপর্বে মেয়ের বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি গমনে যে বিচ্ছেদ রচিত হয় তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে।পরিবারের সবাইকে ছেড়ে যাওয়ার যে যন্ত্রণা গানের পরতে পরতে তা পরিস্ফুটিত হয়ে ওঠে।

আদিবাসী এই মানুষজন জীবনের চড়াই উতরাই পেরোতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে স্বদেশপ্রীতি, মাতৃভূমির প্রতি ঋণ প্রকাশ থেকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আশ্রয় খোঁজে এই ঝুমুর গানে। অমিত মাহাতর কলমে পরিতোষ মাহাতর কন্ঠে –
মা মাটি জনমভূমি হামার কাছে সনা
হামি যে এক গরীব গাঁয়ের ভখা দুখা ছানা”
গানটি যেমন এখানকার মানুষের অভাব অভিযোগ ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে তুলে ধরেছে, তেমনই গানের মধ্যে জন্মভূমির প্রতি এক গভীর মাতৃঋণ প্রকাশ পেয়েছে।

আবেগপ্রবণ দরিদ্র উপজাতিভুক্ত মানুষগুলো এই গানকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকেন। তাইতো তাঁরা বেঁচে থাকার ফাঁকে কৃষিকাজ বাদে যেটুকু সময় পান, মেতে থাকেন বিভিন্ন পরবে আর নিজেদের জড়িয়ে রাখেন ঝুমুরের মায়াজালে। ঢোল, ধমসা, মাদলের তালে জঙ্গলমহলের মাটিকে মহকে দিয়ে তাঁরা অনায়াসে গেয়ে ওঠেন –
“হামকে নাইচতে শিখাঞ দে, হামকে গাইহতে শিখাঞ দে”
এভাবেই তারা ভুলে থাকেন সমস্ত না পাওয়ার যন্ত্রণাকে।

আবার কাজের ফাঁকে যে অবসর টুকু পান তাঁরা, তাতেও বাঁধেন ঝুমুরের সুর। প্রেম পিরিতির গোপন কথাও যেন প্রকাশ পায় পাতাকুড়ুনি ও পশুপালক উপজাতি যুবক যুবতীর একান্ত আলাপে। শাল মহুলে ঘেরা জঙ্গলমহলের আনাচে কানাচে তাই বেজে ওঠে –
“সনাঝুরির বনে বন্ধু পাতা সরু সরু
যাব পাতা কুড়হাতে হে, তুমি নিয়ে যাবে ছাগল গরু।”
শুধু প্রেম বা মিলনের সুখই নয়, বিচ্ছেদের সুর- মোহভঙ্গের যন্ত্রনার বহিঃপ্রকাশও এই ঝুমুরের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। প্রেয়সীর সাথে বিচ্ছেদে যন্ত্রণা কাতর প্রেমিকের করুণ আর্তি নিজের ভালোবাসার প্রতি –
“ভালোবাসঞে কথা দিলি বাঁইধব্য সুখের ঘর
আর হামকে ভুলঞে কেমনে আইজ কাটালি বাসর।”

আবার জঙ্গলমহলের সেই অন্ধকারতম দিনগুলোতেও তাঁদের বেঁচে থাকার নিত্যসঙ্গী ছিল এই ঝুমুর। কখনো বা প্রতিবাদের ভাষা, কখনো বা বেঁচে থাকার আর্তি সবেরই মাধ্যম এই লোকগান। তাইতো জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়েও তাঁরা গেয়ে বেড়ান –
“কেমনে আইল আকাল ঝড়,
হইদকে উঠে লালগড়।
হামদের মাথা উঁচায় বাঁচায় নকি মানা
কেমনে রাখিব ছানাপুনা।”
– এভাবেই যেন জঙ্গলমহলের হৃৎস্পন্দনে জেগে থাকে ঝুমুর, প্রাণ সঞ্চার করে কালো শরীরের ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ মানুষগুলোর বুকে। এভাবেই আলোচনার প্রারম্ভে উল্লেখিত লাইনগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে এই সমস্ত মানুষের জীবনে।

তবে সমগ্র ছোটনাগপুর অঞ্চলের ঝুমুর সঙ্গীতকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে ঝুমুর গানের মধ্যে স্থানীয় ভাষা ও লোকনীতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ওড়িশার ঝুমুরে ওড়িয়া ও ঝাড়খণ্ড-বিহারে হিন্দি ভাষার টান রয়েছে। আবার পুরুলিয়ার ঝুমুর মুলত জীবনযন্ত্রনার প্রতিচ্ছবি পরিস্ফুটিত করে। অন্যদিকে ঝাড়গ্রামের ঝুমুর মুলত রঙের হয়। ঝুমুর সঙ্গীতের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় মঞ্চশিল্পীদের অধিকাংশই এই ঝাড়গ্রাম অঞ্চলের। বর্তমানে এই অঞ্চলের ঝুমুর চিরাচরিত ঝুমুর থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। লোকসঙ্গীতকে অনেকেই জীবিকা হিসেবে বেছে নেওয়ার কারনে অনেক ক্ষেত্রে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী রচিত হচ্ছে গানের কথা। যা পরবর্তীকালে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে এই সুপ্রাচীন লোকসঙ্গীতের অস্তিত্বকে। তাই জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি প্রাচীন লোকগীতের অস্তিত্ব রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা নিতে এগিয়ে আসতে হবে এই অঞ্চলের সঙ্গীত ও সংস্কৃতিপ্রেমী বর্তমান প্রজন্মকে।

বর্তমানে শহুরে মানুষ জনের মনে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণার উদ্ভব হয়েছে এই প্রাচীন লোকসঙ্গীতটিকে নিয়ে। শুধুমাত্র ভাষা সাদৃশ্যের ভিত্তিতে পুরুলিয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠী নির্মিত রঙ চড়ানো কিছু ক্যাসেট নির্ভর গানকে ঝুমুর ভেবে ভুল করেন অনেকেই। তবে লোকসঙ্গীত সম্পর্কে নুন্যতম ধারণা যাঁদের রয়েছে তাঁরা কখনও এই ভুল করবেন না বলেই আশা রাখি। এই আলোচনায় আমি সেই সমস্ত মানুষজনের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইছি যারা পুরুলিয়ার সব গানকেই ঝুমুর ভেবে ভুল করেন। আসলে ঝুমুর হল এই অঞ্চলের মানুষের আবেগ, ভালোবাসা। অন্যদিকে পুরুলিয়ার বেশ গোষ্ঠী যৌনতা নির্ভর কিছু গানের ক্যাসেট বানিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জনের সস্তা খেলায় মেতেছে। তাই ওই সমস্ত গানের উপর ভিত্তি করে একটা সম্পূর্ণ সমাজের সংস্কৃতিকে খারাপ ভাববেন না। বরং ওই সমস্ত বিকৃতিমনষ্ক মানুষের অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে একটি সুপ্রাচীন লোকসঙ্গীতকে কলুষিত করার চক্রান্ত রুখে দিতে এগিয়ে আসুন আপনিও। একটু খেয়াল করে দেখলেই বুঝতে পারবেন যারা ওই সমস্ত গান বাজারে ছেড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চাইছে তারা কেউই কিন্তু কুড়মি তথা আদিবাসী জনজাতিভুক্ত নয়। তাই সমাজ-সংস্কৃতি রক্ষার তাগিদ তাদের মধ্যে কোনদিনই লক্ষ্য করা যায়নি। এর ফলে ঝুমুর গান সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে চিরাচরিত ঝুমুর সঙ্গীতের আসর, মার খাচ্ছে প্রকৃত ঝুমুর শিল্পীরা। তাই সকলেই সচেতন হন, ঝুমুর শুনুন ঢোল-ধমসা-মাদলের তালে। আর বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করুন এই ঐতিহ্যশালী সুপ্রাচীন লোকসঙ্গীতটিকে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: লেখার প্রয়োজনে বহু গান ব্যবহার করতে হয়েছে যার কিছু প্রচলিত ঝুমুর, কিছু ব্যক্তি রচিত ঝুমুর। সবক্ষেত্রে ঝুমুর কবির নাম জানা সম্ভব হয়নি। ফলে ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে না পেরে আমি দুঃখিত। লেখাটি লিখতে গিয়ে ঝুমুর গানের রূপ মাধুর্য ও রস আস্বাদনের যে সুযোগ পেয়েছি তার জন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। জঙ্গলমহলের মানুষ হিসেবে এই সুযোগ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ সমস্ত ঝুমুর কবি ও শিল্পীদের কাছে। এছাড়াও যে সমস্ত ইউটিউব চ্যানেল ঝুমুর গানকে বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াসে ব্রতী রয়েছে তাদেরও ধন্যবাদ জানাই।

লেখা পাঠাতে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here