শা ন্ত নু শ্রে ষ্ঠা-র কবিতাগুচ্ছ

3
669
পরিচিতিঃ পেলব নদীর মতো বয়ে চলা। কখনো কবিতা অথবা গল্পের বাঁকে একটুখানি থামা। অবসর মেঘ জুড়ে রাখা উড়ন্ত দিন, গানে গানে ছুঁয়ে যায় কবির বিষণ্ণ দুপুর। যাপিত শব্দেরা প্রিয় নৈঃশব্দ থেকেই একদিন গাছ হয়ে যায়। দূরের আকাশটাকেই আনমনে কবিতা ভাবে।বাইফোকালিজম্-র পাতা আজ তাঁরই একগোছা কবিতায় সেজে উঠল।

শা ন্ত নু   শ্রে ষ্ঠা-র কবিতাগুচ্ছ

 

মফস্বল ও বাবার ছায়া

এই শহরে কেউ চিঠি লেখেনা। হাজার হাজার নামহীন ঠিকানারা ফিরে ফিরে আসে। আবার চলে ও যায়। হাতে টানা রিক্সা থেকে আমার ঠিকানা আরো বহুদূর। রোজই ভাবি ফিরে যাব। বুকে বাজে অচেনা পাখির ডাক। গন্ধমাখা দুপুর। মায়ের আঁচলে বেঁধে সেখানে ফিরে যায় সব অন্ধকার।

অথচ এখানে বাতাসের ওড়াওড়ি জানেনা মেঘেদের স্বভাব। বৃষ্টি এলে বুকের কাছে চেয়ার টেনে বসি। প্রিয় মফস্বল আমার চারিপাশে আলো ফেলে যায়। আলোর ভিতর ঝুঁকে দেখি খবর কাগজ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা। ক্রমশ আমার দিকে গড়িয়ে পড়ে মফস্বল ও বাবার ছায়া।

 

ফুরিয়ে যাবার আগে

এখন আর লেখা আসে না
খোলা পাতার পাশ দিয়ে হেঁটে যাই

ঝুঁকে থাকি আঙুল ছোঁয়ালে

কিছুই লিখি না

ক্লান্তি নামে
নীরবতাটুকু ছুঁয়ে দেখি

এভাবেই আমি ও সে
জাপটে ধরে শুয়ে আছি অনন্তকাল

খোলা ছাদের নিচে নিঃসঙ্গ হাঁটি
তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ি

ফুরিয়ে আসি আস্তে আস্তে

 

মেঘ


অতঃপর শরীর খুলে রাখি
বুকের ওপর শুয়ে থাকে নীরবতা
কিছুটা মেঘ অথবা জল

অথচ তাকাতে পারিনা কোনোদিকে
আয়নার সামনে নড়ে উঠি
পাশ ফিরি

শুধু আমিই নেই!
আমার থেকে ও নিঃস্ব আমার অভাববোধ

জানালা খুলে দেখি শ্বশানের নদী
ভাসিয়ে দিই নৌকা
তবু কেউ কারোর দিকে তাকাই না

শুধু দেখি,
মনখারাপের পাশে দূরে কোথাও মেঘ ক’রে এসেছে।

 

অবশেষ

মায়ের শাড়ির আঁচলের গন্ধ আর শঙ্খের ফুঁ হয়ে এখনো হয়ত বাবা আছে কোথাও। এই সব চলে যাবার কাছে প্রসন্ন ধানের ওপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্ধকার। বুকের ভিতর কেঁপে ওঠে ছায়া। স্মৃতিশহর পুড়তে পুড়তে মিশে যায় ধুলোয়। অন্ধকারে উঁকি দেয় সূর্যাস্তের কথা। বিষাদের মধ্যে ও ছুড়ে দিই আদর জল।

এইসব বিয়োগপ্রণালী আদতে শব্দহীন কান্নার স্বর।

সমস্ত শুশ্রূষার কাছে পড়ে থাকে আধপোড়া শূন্যতার অবশেষ।

 

দেশের গল্প

তুমি বলবে দেশের কথা আর আমি বলব হরিণের গল্প।

কেন্দ্রের পাশে থাকবে সিংহ।
অথবা রাজ্যের পাশে বাঘ।

তারপর বাঘ, সিংহ আর হরিণকে একই খাঁচায় বন্দী রাখব।

আমরা শুধু বাইরে দাঁড়িয়ে মজা দেখব।

 

মা ও বাড়ির গল্প

হেমন্তলীন আলোর মতো চলে গেলেন বাবা!
বুকের গভীরে কলমিলতা জন্মাল।
কান্নার পাশে কেঁপে উঠল জোনাকির শব্দ।

শীতের শরীরের সামনে আকাশছোঁয়া গাছগুলি হাঁ করে তাকিয়ে আছে এখন।

একটু একটু করে পুড়ে ছাই হয়ে যায় আগুনরাঙা শাড়ি।ছায়া ফেলে রোদের ভিতর দীর্ঘ হয় শোক। কান্নার ভিতর কমে আসে ঈশ্বরের দূরত্ব। বিষণ্ণ ছায়াপথ থেকে গড়িয়ে পড়ে জল।

শূন্যতা ছাড়াতে ছাড়াতে মা ও বাড়িটা অন্ধকারে ডুবতে থাকে।

লেখা পাঠাতে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here