অনুলিপি ৪, প্রসঙ্গ ভ্যালেন্টাইন ডে

1
120
অনুলিপি-৪

                       ভ‍্যালেনটাইন স্পেশাল…
                 ******************
                                            কবি মিশ্র

                                             ছবিঃগৌতম মাহাতো

প্রিয় তুই,
  ঘুম ভেঙেই খুব তোর কথা মনে পড়ছে.. ক‍্যালেন্ডারে আজ ভ‍্যালেনটাইন ডে, ভালোবাসার দিন। তুই তো আমাকে ভালোবাসতিস্। প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত একসঙ্গে শেয়ার করতাম। ওগুলো কি ভালোবাসার দিন ছিল না। তাহলে মিথ্যে ভালোবাসার দিন, এমন একটা দিন ক‍্যালেন্ডারে আসে না কেন ?

তুই বলতিস, কোন দিন দিয়ে ভালোবাসাকে বাধা যায় না, মেনেও নিতাম। কিন্তু আজ যখন এই দিন গুলোই অন্য কারো সঙ্গে এনজয় করে স্টেটাস দিস্, তখন কি মনে হয়? তুই এতটা মিথ‍্যে ছিলি!!
এখন কি মনে হয় জানিস্, স্বার্থের কাছে ভালোবাসাও হার মানে। প্রয়োজনটা আগে, ওটা ফুরিয়ে গেলে ভালোবাসা মূল্যহীন। তবে সব ভালোবাসাকে এভাবে মূল‍্যায়ন করিস না। ঠকে যাবি।

তুই জিতেছিস কিনা জানি না, তবে আমি হারিনি। আমি আমার ভালোবাসার অনেক মূল্য পেয়েছি। ছোট্ট কচি কচি মুখ গুলো যখন বলে উঠে, “love u darling”..বিশ্বাস কর সত্যি বলছি, তোর নকল ভালোবাসার থেকে হাজার গুন খাঁটি বলে মনে হয়েছে আমার।

এখনো হয়তো ভালোবাসি বলে তোর কথা মনে হলো, কিন্তু তোর ওই দৈন‍্য স্বার্থপর ভালোবাসাকে আজ আমি ঘৃণা করি। মেকি ভালোবাসার কাছে কতটা বিকিয়ে দিতে পারিস নিজেকে, ভাবতেও অবাক লাগে , জানিস, এই তোকেই আমিই পাগলের মতো ভালোবাসেছি, হয়তো আজও বাসি, না হলে এত দিন পর মনে আসবে কেন ? এখন তোকে দেখলে আমার করুণা হয়। আর কত নিজেকে নীচে নামাবি।

ভাবিস , ভালোবাসা খুব সস্তা, – এতটা ভুল ভাবনা নিয়ে থাকিস না। ভাবছিস তো, এতদিন পর খুব জ্ঞান দিচ্ছি..নারে এটা জ্ঞান না, ভয় হয় ,আবার ও কাউকে ঠকাচ্ছিস দেখে…যদিও ওটা তোর ব‍্যক্তিগত ব‍্যাপার।

চিঠি লেখার অভ‍্যাস চলে গিয়েছিল, আজই হঠাৎ মনে হলো লেখার কথা, দেখ লিখতে লিখতেই আমার কচি কচি মুখ গুলো বাগান থেকে বিভিন্ন ফুলের একটা তোড়া বানিয়ে আমাকে দিতে এসেছে।তাতে গোলাপ ও আছে, এবার বল তোর মিথ্যে ভালোবাসার থেকে এদের ভালোবাসা কতটা খাঁটি…
একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছে, চিঠিগুলো কি এখনো রেখেছিস, পারলে ফেরত দিস্, ওগুলো তোর আর কাজে লাগবে না, একটা সময় কি মনে হতো জানিস্, আমার থেকে তোকে কেউ আলদা করতে পারবে না,..’ বিশ্বাস’ তখন মনে মনে হাসত,আমার ভাবার বোকামি দেখে।

আমি জানি এতদিন পর আমার চিঠি দেখে বেশ অবাকই হবি, mobile, whatsapp, massenger , ছেড়ে কেন, চিঠি লিখছি !!…আসলে অনেক দিনই তোর নং গুলোকে সরিয়ে দিয়েছি…জানি মোবাইলে থাকলেই বারবার দেখতে ইচ্ছে করবে, তুই অনলাইনে থাকলে কেন জানি বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে, তাই না দেখলে তো আর হবে না… কিন্তু জোর করে মন থেকে তো আর সরাতে পারছি  না।

এটাই শেষ চিঠি লিখছি, আমার ব্লাডে লিউকোমিয়া ধরা পড়েছে, কয়দিন ধরে জ্বর কমছে না..ডাক্তার বলেছে,তাড়াতাড়ি হসপিটালে অ্যাড মিট করতে, কিন্তু আমিই যাচ্ছি না। বাচ্চাদের পরীক্ষা চলছে তাই মন ও চাচ্ছে না, কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে, দু এক দিনের মধ্যেই ভর্তি হতে হবে।
ভাবছিস তো , এত বাচ্চা কোথায় ছিল? আমি একটা অনাথ আশ্রমে বাচ্চাদের ভার নিয়েছি , যাদের ভালোবাসার কেউ নেই। কিন্তু জানি না আর কত দিন ওদের সঙ্গে থাকবো।

খুব জানতে মন চায়, সত্যিই তোর পুরোনো কথা একটা ও মনে নেই , শুধু একবার কথা বলার জন্য, একবার দেখা করার জন্য কতটা ছটপট করতিস্ … প্রতিটা অনুভূতি স্পর্শ, আবেগ, কিচ্ছু মনে নেই…আমি কষ্ট পেলে, তুই কাঁদতিস, সান্ত্বনা দিতিস্, আমি অভিমান করে না খেলে কত রাগ করতিস্, দিব‍্যি দিয়ে খাওয়াতিস্…সব ভুলে গিয়েছিস…যেগুলো মুখে বলতে পারতাম না, চিঠিতে লিখে দিতাম… সেই চিঠি তোর বুক পকেটে রেখে দিতিস্, আমার চোখের জল তোর সহ‍্য হোতো না… কিচ্ছু মনে নেই তোর !!
অথচ আজ দেখ না চাইতেই চোখ ভিজে যাচ্ছে, সেটাও তোর জন্য…থাক আর কিছু লিখব না, পারছি না আর…আজকের দিনটা খুব খুব ভালো কাটুক তোর…খুব সুখী হোস….
                       ইতি 
                    “অসমাপ্তি”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here