অধৈর্য্যের পুরনো মেঘ–লিখছেন-লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

4
411

  অন্য গদ্য


                 অধৈর্য্যের পুরনো মেঘ

                                                                                                ছবিঃগৌতম মাহাতো

             

                  লিখছেন-লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

                                                   

কবি লিটল ম্যাগাজিনগুলোর কাছে একটা অতিপরিচিত নাম।কাছের মানুষ।কবিতার ভেতরই তাঁর নিরন্তর গতায়াত ও যাপন।কিন্তু মাঝে মাঝে কলমের মুখ দিয়ে গদ্যের লাভা উদ্গিরন হয়।তাঁর কবিতায় মশগুল সব কবিতা প্রেমী মহল।এপার বাংলা ওপার বাংলায় অজস্রলিটল ম্যাগাজিনসহ নানান প্রথম সারির বানিজ্যিক পত্রিকাতেও লিখে চলেছেন নিরন্তর।

                   ভয়ডর সকলেরই আছে। জীবনটাকে      জীবনের কাছে নিয়ে যেতে মানুষের ভয় একটু বেশি। মনের কথা বলতে চাইলেও মানুষ সেকথা বলতে ভয় পায়, সঙ্কোচ ও কাজ করে। সে সঙ্কোচ কিংবা ভয়ের হাত ধরে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয় কোন মৃত বাকল খসে পড়া বৃক্ষের নীচে। সে বৃক্ষের নীচে উড়ছে পোড়া গন্ধ, কিছু শিরীষ পাতা কিছু অর্জুন পাতার ছাই এলোমেলো, কোমর বাঁকা চম্পকী ঠাকুমা ঊষায় বিছানা ছেড়ে বুঝতে পারছে না আগুন এল কোন দিক থেকে। সামনের ডোবায় চারা পোনারা ঠোঁট তুলে টোপ টানছে, সারি সারি সেই ঠোঁট,  এত অভাব বোধ কেন বাতাসে? কার কাছে জানতে চাইবেন তিনি। যেমন এই তিয়াত্তর বছরেও জানতে পারেন নি কোন দিক থেকে বক উড়ে আসে, আর কোন দিকেই বা উড়ে যায় ওদের ঝাঁক। কোনো দিন জানতে দিল না বুড়োটা। তার আগেই মরে ভুত হয়ে গেল লোকটা। এই নিয়ে একা শুতে ভয় করে, ঘুমিয়ে পড়তে ভয় করে,  যখন অধৈর্যের পুরোনো মেঘে জড়ানো গলি দিয়ে ফিরে যায় শব্দহীন লোকটা ; গভীর অভ্যাসে তা আর উপেক্ষা করতে পারে না। একচোখা শালিকের মতো  হারিয়ে দেয় নিজস্ব ডোবার ছোটোখাটো ঢেউ। কলমি বনের ছায়াজড়ানো আদিমতা আলোর পরিচিতি নিয়ত বাড়িয়ে চলছে ঝলসে যাওয়া খিদে। এই মেঘ জড়ানো ছায়া  কিংবা  অন্ধকার ছুঁয়ে দেখা এইসবই পৃথিবীতে করুণা থেকেই ভীতি আসে হেঁটে হেঁটে । বৃষ্টির শব্দের মধ্যে শরীর কিংবা শস্যদানার বিষাদকে মিশিয়ে দেয় আকারহীন স্মৃতিতে।
 কত কিছু হতে চায় মানুষ। সে এক অন্ধকার কুণ্ডলীর জলের ভিতর নিঃশ্বাস নিতে নিতে দু হাত জড়ো করতে চায়। যেন বলতে চায় – আলো দাও, বাতাস দাও। আর কিছু নয়, শুধু অস্থিরতার জন্য স্পেস দাও। ওই স্পেসটুকুর জন্য আমার এক কাকু সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন। হয়ে গেলেন স্বামী কৃতাত্মানন্দ। তবে কি এই স্পেসই ভয়। যার জন্য মানুষ ছুট্টে বেরিয়ে যায় রাস্তায়। আমি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনমাথায় বাঁশঝাড়ের নিচে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখি। আর দেখি পুকুরগুলো খেয়ে নিচ্ছে মাটি। সেই ক্ষয় চাইছে  বৃষ্টিতে ভিজতে, আহা, একটু নাচি,  নাহয় একটু বৃষ্টির ফোঁটার আঘাত সহ্য করুক ত্বক, লোমকূপে শিহরণ আসুক, কিন্তু পর মুহূর্তে চোখ বড় বড় করে কেউ যেন বলে – ভিজো না,  সর্দি হবে, বিছানায় পড়বে। ব্যস্ হয়ে গেল, বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছেই, আপনি হাত পা গুটিয়ে শামুকখোলের ভিতর হাচ্চো হাচ্চো করুন। অথবা ভোট প্রার্থী এলেন, বললেন – আমাকে এই চিহ্নে ভোটটা দেবেন। আমি আপনার জন্য। স্বর্গের সিঁড়িটা বানিয়ে দেব। যা লঙ্কেশ্বর রাবণ বানাতে পারেননি। আপনি বলতে চাইছেন- না বাপু, কতদিন তোমাদের দেখলাম, চাঁদটাকে আমার হাতে  ধরিয়ে দেবে বলে ছিলে,  তা তো দিলে না বাপু, বরং আমাদের রাস্তাঘাটে সাপের চাষ করলে,  আমরা এখন বিছানায় ঘুমোতে ভয় পাই, কখন যে ছোবল দেবে সেই সাপ। তোমাকে ভোট দেবার ইচ্ছেটাই নেই। বলতে পারলেন না সত্যি কথাটা। কারন এখানেও সেই ভয়, কেননা সাপেরা ফণা উঁচিয়ে বসে আছে আপনাকে ছোবল দেবার জন্য। আসলে এই ভয় নিয়েই আমরা বাঁচি। এই ভয় নিয়েই মাটি কোপাই। মাটিকে উর্বরতা দিতে আমাদের কত শ্রম, কত ঘাম। আলপথ ছুঁয়ে আসে আরোগ্য বাতাস। নিবিড় দুপুরে না-বলা কথা বলতে চাওয়া স্বপ্ন মেখে তাকিয়ে থাকি ফসল খেতের দিকে- সেখানে সেখানে রোদ্দুর বিছানো নবান্নের রং। সোনালি আগুনে ধারণ করি কালচক্র।

                                ★★★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here