মোহনা মজুমদার-র তিনটি অণুগল্প 

0
197
মোহনা মজুমদার জন্ম-১৯৯১, কলকাতা অঙ্কে স্নাতকোত্তর করে শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত।প্রথম প্রকাশিত গল্প “আ ওয়াক টু কলকাতা”(কলকাতা ইন এ্যন্ড আউট নামে ই বুকে)।এছাড়াও “তাসের ঘর”, “ছিন্ন সম্পর্ক”,”সেপারেসন”, “এক্সপেকটেসন” ,”মেঘের যুদ্ধ”, “মরিচীকা”,”গন্তব্য” ইত্যাদি নানা গল্প,কবিতা, প্রবন্ধ, অনুগল্প বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।লালমাটি সংবাদ, রংমিলান্তী,দর্পণ, স্টোরি এন্ড আর্টিকেল, হৃদস্পন্দন ,tech o touch livingplus,swabdodwipইত্যাদি নানা ওয়েবজিন এ প্রায়শই লেখালেখি করেন। নেশা-গান শোনা,গল্পের বই পড়া,রান্না করা।

 

মোহনা মজুমদার-র দুটি অণুগল্প 

 

ফুরোনো বর্তমান


আজকের এই মূহুর্ত ,এও তো ঠিক পরবর্তী সন্ধিক্ষণে অতীত হবে, হচ্ছে।দেখতে পাচ্ছি মূঠোর বালির মতো মূহুর্তগুলো ঝরে যাচ্ছে ,আমি চাইলেও ধরে রাখতে পারছি না । আমি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম খানিক,তুমি এগিয়ে চলেছো আমায় ফেলে, ধীরে ধীরে এই বন্ধন শিথিল করে তুমি এগিয়ে চলেছো। আর কোনদিন দেখা হবেনা জেনেও চোখে জল আসছে না এই মূহুর্তে, শুধু মনে হচ্ছে কয়েক মূহুর্ত আগের এই আবেশে এখনও বুঝি আমি ভেসে চলেছি,এখনও বোধহয় তুমি আমায় ছুঁয়ে আছো,আমার শরীর ভেদ করে যে মনটা আছে, তার প্রতিটি অঙ্গ স্পর্শ করে।সত্যি আর কোনোদিন দেখা হবেনা? ধুর কি সব ভাবছি,তুমি তো বলেছো আবার আমাদের দেখা হবে…তবে কেন এতো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে বুকের ভেতর টা ।তুমি কত সহজে এগিয়ে যেতে পারছো,তবে আমার পা-গুলো কেন থমকে গেছে, খানিক অবশ হয়ে আছে, সামনে দিয়ে ছুটে যাচ্ছে গাড়ির সারি ,চোখ আবছা হয়ে আসছে,যতোদূর চোখ যায় চারপাশে কোথাও তুমি নেই,তবু তোমার গায়ের গন্ধ এখনও আমার অন্তর্বাসে লেগে আছে।

নির্যাতন


“আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন, মেরেই ফেলবো তোমায়,আমার পয়সায় খাবে,আবার আমার চোখের সামনেই অন‍্য ছেলের সাথে ফূর্তি করবে, নোংরামি করবে, এত বড় সাহস” -চিৎকার করে বৌ এর গলা টা টিপে ধরেছে দীপক,চোখ গুলো যেন লাল হয়ে ঠিকরে বেরোচ্ছে, গিলে খেতে চাইছে অনিতার নির্মল দেহ।
সে করুণ অসহায় দৃষ্টিতে তার স্বামীকে জিগ্যেস করার চেষ্টা করলো “কি করেছি আমি সেটা তো বলবে?”
-কি করেছি? ওই ছেলেটা কে শুনি? যাকে ফোনে বলছো আমি তোমায় ভালোবাসিনা ?মাল খেয়ে বাড়ি ফিরি মাঝরাতে ? তোমার গায়ে হাত তুলি?
-ওর নাম স্পন্দন। আর এগুলো কি মিথ্যে? আর এতে নোংরামি টাই বা কি দেখলে? আর স্ফূর্তিটাই বা কি ?
-আমি আমার বৌকে মারবো পিটবো যা খুশী করবো,শুনে রাখো তোমার প্রতি আমার কোনো ভালোবাসা আসে না,এতে বাইরের লোক কি করবে?

ঘেন্নায় কুণ্ঠায় অনিতার মাথা হেঁট হয়ে আসে, এত অপমান, অবহেলা, লাঞ্ছনা নিয়ে একটা মানুষের সাথে আর এক ছাদের তলায় স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় করা সম্ভব হচ্ছে না…যে সম্পর্কে এতটুকু সম্মান নেই মর্যাদা নেই ভালোবাসা নেই, শুধু আছে মেকী অধিকার বোধ,পুরুষত্বের বৃথা আস্ফালন ।সে সিদ্ধান্ত নেয় এই সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসবে…কিন্তু এই চল্লিশের গোড়ায় এসে একজন সাধারণ গ্রাজুয়েটকে কে চাকরি দেবে ?তবে কি ওই দু মুঠো ভাতের জন্য ওই জানোয়ারটার সাথেই থাকতে হবে?ওর একবার মনে হয় একবার কি স্পন্দনকে ফোন করবে?না থাক।আমার জীবনের জটিলতা আর ওর ওপর চাপিয়ে দেবোনা।
হ‍্যাঁ,এভাবেই মরে বেঁচে রয়েছে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের হাজার হাজার নারী ,মানষিক শারীরিক নির্যাতন সহ্য করে চলেছে নিরন্তর।তবু মন চাইলেও সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনা,অন‍্য কাউকে মনে জায়গা দিতে পারে না,দিলেই এই সমাজ তার চরিত্রে কালি ছেটায়,অথচ তার যন্ত্রণা ,না পাওয়াগুলো একবারও দেখার চেষ্টাই করেনা।

লেখা পাঠাতে পারেন

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here