বাঙালির মৎস্য পুরাণ (দ্বিতীয় পর্ব) ঃ লেখা ও ছবিঃ রাকেশ সিংহদেব

0
60
  1. বাঙালির মৎস্য পুরাণ (দ্বিতীয় পর্ব)ঃ

“শোল দিয়ে ভালো ঝোল হবে”

লেখা ও ছবিঃ রাকেশ সিংহদেব

                                            

প্রকৃতি প্রেমের আরেক নাম।ভালোবাসার কোনও বাটখারা হয় না তা লেখকের সাথে না যাপন করলে বোঝা বড্ড দায়।মূলত রাকেশ একজন ছবিওয়ালা।আর তার চর্চার আধার সেই সব অবলা জীবজন্তু পশু পাখি।নিয়মিত লেখেন বিভিন্ন বানিজ্যিক পত্রিকায়।এই মুহূর্তে কাজ করছেন হাতি নিয়ে।বিভিন্ন “পরিবেশ বাঁচাও” সংস্থার সাথে জড়িয়ে ফেলেও তিনি নিরঙ্কুশ।একক।তিনি জানেন ভালোবাসতে ফেরৎ পেতে নয়।ইনি বাইফোকালিজমেরও অন্যতম সদস্য।

বাঙালির খাদ্যরসিক হিসেবে যতটা সুনাম কুড়িয়েছে তার চেয়ে বহুগুনে ছড়িয়েছে পেটরোগা বিশেষণে আখ্যায়িত হয়ে। বাঙালির জাতীয় শোক ‘পৈটিক গোলযোগ’-এর ধন্বন্তরি সাধের শোল। তাই কবি বলে গিয়েছেন – ‘ঘোলা জলে শোল মাছ থাকে, শোল দিয়ে ভালো ঝোল হবে’। আর সেই যে শোল বাবাজি ঘোলা জল ছেড়ে ঝোলে এসে পড়লেন তারপর তো সে এক অন্য ইতিহাস! কাঁচা আম দিয়ে শোল মাছের পাতলা ঝোল তো মহৌষধ! নিজেই এক সিগনেচার ডিশ!
শোল মাছের দেহ নলাকার এবং গোল। মাথার উপরিভাগ চ্যাপ্টা। বড় হাঁ এবং নীচের চোয়াল উপরের চোয়ালের চেয়ে বড় হয়। এরা দৈর্ঘ্যে এক দেড় ফুট ঠেকে প্রায় তিন ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এদের পিঠের পাখনা কানকোর শেষ থেকে শুরু হয়ে লেজ পাখনার আগে পর্যন্ত একটানা থাকে। পায়ু পাখনাও একটানা থাকে তবে ছোট হয়। পেজের পাখনা চামচের মতো। পাখনার ডগায় লালচে বর্ডার দেখা যায়। মাথা ও পিঠের দিক সবুজাভ কালো বা মিশকালো। পেটের দিক হলদেটে সাদা। পিঠ থেকে পেটের দিকে উলম্বভাবে কালচে দাগ বা ছোপ কানকোর পেছন থেকে লেজ পর্যন্ত দেখা যায়।
শোল মাছের বৈজ্ঞানিক নাম: Channa striatus । প্রজনন সময় হল বর্ষাকাল। কিন্তু তারা সারা বছর ধরে প্রজনন প্রক্রিয়া করতে পারে। তারা ধানের মাঠে বাসা তৈরি করে এবং বৃষ্টির সময় আগাছা দিয়ে  জলাধার তৈরি করে। মহিলা মাছ সেখানে হাজারখানেক হলদে বাদামী ডিম পাড়ে। শিশু মাছের জন্ম না হওয়া পর্যন্ত পুরুষ ও মহিলা মাছ দুজনেই ডিমের প্রতি নজর রাখে। ডিম ফুটে বেরনো বাচ্চাগুলো প্রথমে স্বচ্ছ থাকলেও পরে কমলা বর্ণ ধারন করে। বাচ্চাদের ঝাঁকের সাথে বাবা মা পাহারায় থাকে। কয়েকমাস পর বাচ্চারা একা থাকা শুরু করে। শোল মাছ প্রধানত আমিষাশী, কিন্তু সর্বভুক মাছ। বাচ্চা অবস্থায় এই মাছ জু-প্ল্যাংটন খায় কিন্তু যখন তারা বড় হয়ে যায় তখন তারা গেঁড়ি গুগলি, কীটপতঙ্গ এবং ছোট আকারের মাছ, ব্যাঙ খায়। এমনকি এরা তাদের নিজস্ব প্রজাতির মাছও খায়। এগুলির পাশাপাশি তারা প্রক্রিয়াজাত মাছের খাবার, চালের গুড়ো ইত্যাদি খাবারও খায়।
জালের পাশাপাশি কম কাদাজলে হাত দিয়ে শোল মাছ ধরা হয়। বেশি জলে ছোট ছোট বঁড়শির কাঁটায় জ্যান্ত মাছ গেঁথে তা টোপ হিসেবে ব্যবহার করে শোল মাছ ধরা হয়। আবাসস্থল নষ্ট, বাজারে প্রচুর চাহিদার জন্য অবৈধ মাছ ধরার সরঞ্জাম ব্যবহার করে মৎস্য আহরণের ফলে বর্তমানে এ মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। আমাদের রাজ্যের অধিকাংশ স্বাদুজলের নদ নদী, পুকুর নালা, খাল বিল নগরায়নের কবলে পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বা বিভিন্ন ভাবে উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে শোল মাছের সংখ্যা দ্রুত কমে আসছে। রাক্ষুসে মাছ হিসেবে কুখ্যাতি থাকার কারনে পুকুর পরিস্কারের সময় এদের মেরে ফেলা হয়। তবে আশার কথা বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকবার কারণে বিভিন্ন জলাশয়ে বানিজ্যিকভাবে শোল মাছের চাষ শুরু হয়েছে।

                                     ★★★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here