বিশ্বমিথের দরবার(৭ম পর্ব) কলমে-দে ব লী না   রা য় চৌ ধু রী   ব্যা না র্জি

3
139
দেবলীনা রায়চৌধুরী ব্যানার্জি পেশায় ইংরেজীর অধ্যাপিকা তবে তাঁর ভালোলাগা ও ভালোবাসায় গাঁথা হয়ে আছে দেশ বিদেশের পুরাণে। ইদানিং দেবলীনা সেই পুরাণ সাহিত্য ও প্রতীকীবিদ্যা নিয়ে গবেষণারত। প্রধানত, আন্তর্জাতিক জার্নালে লেখালেখি ও বিভিন্ন সেমিনারে উপস্থাপন। একটি ইংরেজী ও একটি বাংলা কবিতার বইয়ের পর,সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে “Into the Myths” নামে দেশ-বিদেশের পুরাণ নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ সংকলন। Myth Muhurto নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলরও কর্ণধার। দেবলীনাও বাইফোকালিজম্-র একজন অন্যতম সদস্যা।

বিশ্বমিথের দরবার(৭ম পর্ব)

কলমে-দে ব লী না   রা য় চৌ ধু রী   ব্যা না র্জি

ছবিঃ সু নি পা   ব্যা না র্জি

 

সাইবেরিয়ান পুরাণকথাঃ

আজ সপ্তম পর্বে সাইবেরিয়ার সৃষ্টি কাহিনীগুলোকে আগে দেখা যাক। বরফের দেশ বলে তাদের কি সৃষ্টিকথা থাকবে না? যে কোন প্রাচীন সভ্যতার সৃষ্টি নিয়ে কিছু গল্প, গাঁথা থাকেই।
সাইবেরিয়ার প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী – শুরুতে এক বিশাল সমুদ্র ছিল। সৃষ্টিকারী দেবতারা একদিন একটা হাঁসকে পাঠিয়েছিলেন সমুদ্রের গভীরে ডুব দিয়ে একতাল মাটি নিয়ে আসতে। সেই মাটি নিয়ে এলে তা দিয়ে তৈরি হয় পৃথিবীর এই মাটি। অর্থাৎ ভূতলের মাটি থেকেই পৃথিবীর উপরিভাগের নির্মাণ।

সাইবেরিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ নদীই হলো য়েনিসেই নদী। এই নদীর পার্শ্ববর্তী মানুষ বিশ্বাস করেন যে এই নদী থেকেই সৃষ্টির সূচনা। দোঃ নামের  কোন এক আদি শামান বা দৈব পুরুষ এই নদীতে বিচরণ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।  তাই জলের উপর স্থলের সৃষ্টি আর জলভাগ পরিমানে বেশি। পৃথিবীর ভৌগোলিক দিকটা দেখলেও এই কাহিনীর সত্যতার সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।  ৩ ভাগ জল ও ১ ভাগ স্থল। পুরাণগাঁথার গভীরে উঁকি দিলে একটাই ধারণা বেশ জোড়ালো হয়ে ওঠে আর তা হল – কল্পনা আগে না সত্য ? কোনটা কার উপর নির্ভরশীল?

তুঙ্গুস উপজাতির মানুষের ধারণায় সৃষ্টিকাহিনী আবার অন্য।  তাদের বিশ্বাস, পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল সমুদ্রের ফেনা ও বুদ্বুদ থেকে।  আর তাই তারা বিশ্বাস করে যে পৃথিবীর সৃষ্টি যেমন সমুদ্র থেকে, এর লয়ও সাগরেই। পৃথিবীর সমস্ত বরফ গেলে একদিন এ স্থলভাগ ডুবে যাবে বলে তাদের বিশ্বাস। আধুনিক বিজ্ঞানের গ্লোবাল ওয়ারমিং-এর কনসেপ্ট থেকে কি খুব দূরে?

এগুলি তো উপজাতিদের লৌকিক বিশ্বাস। সাইবেরিয়ান মিথে কিছু কাহিনী আছে যা সামগ্রিক। আসলে উপজাতিভিত্তিক সভ্যতা তো, তাই এই সভ্যতা, ধর্ম অনেকটাই উপজাতিদের জীবনচর্যা ও বিশ্বাস নির্ভর। সাইবেরিয়ান পুরাণকথা অনুযায়ী সৃষ্টির যে দেবতাদের নাম আমরা পাই তারা হলেন –
নম,
ঙ্গা /গাঁ ,
উলগান,
এরলিক,
বুরখান,
কোলম্স,
প্রভৃতি। এরাই জগতের সৃষ্টি করেছেন বলে বিশ্বাস করে মানুষ। পশু, পাখি, মানুষ ইত্যাদি রচনা করেছেন নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে, এমনই হলো প্রচলিত সাইবেরিয়ান ধারণা।

সাইবেরিয়ার পুরাণ অনুযায়ী খাদাউ  ও মামালডি  হলেন প্রথম পুরুষ ও নারী যাদের বংশধর হলেন শামানরা। শামানদের  কথায় পরে আসছি; তার আগে বলি এই প্রথম পুরুষ ও নারীর কথা। এই প্রাচীন ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করতেন যে মামালডি সৃষ্টি করেছিলেন এশিয়া ও আরও বেশ কিছু দ্বীপ।  এবং তারপর খাদাউ তাকে হত্যা করেন ।  
এর্লিকের নাম বারবার উঠে আসে এই পূরণে। তিনি শামানদের অধিকর্তা।  উক্ত সভ্যতায় যিনি প্রচন্ড শক্তিশালী দেবতা। মৃত্যু ও ভাগ্যের অধিকর্তা।  ইনি হলেন প্রথম মানুষের পিতা। তার চেহারার যে বর্ণনা আমরা পাই , তার সাথে আমাদের যমের সাদৃশ্যও প্রচুর।

এই সভ্যতার মূল অক্ষ বা এক্সিস হলো ‘শামানিসম’ বা সাইবেরিয়ার তন্ত্র।  মির্চা এলিয়াদ ‘শামান’ শব্দটির সাথে ‘শ্রমণ’ শব্দের সাদৃশ্যের কথা বলেছেন।  এটি তুঙ্গুস শব্দ যার অর্থ হলো ‘জ্ঞানী বা যিনি অনেক কিছু জানেন’ . উত্তর ইউরোপ ও সাইবেরিয়ায় গতানুগতিক ধর্ম নয় বরং স্থানীয় তন্ত্র নির্ভর।  সাইবেরিয়ান সভ্যতায় দেব-দেবীরা অনেকটা আত্মার অস্তিত্বের মতো, এবং এই শামানরা সাধনার মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে বলেই মানুষের বিশ্বাস। ডাইনিবিদ্যা , ভর পড়া, মিডিয়ামের মাধ্যমে দেবতাদের  ইচ্ছা অনিচ্ছা জানার এক অদ্ভুত পদ্ধতির কথা আছে শামানদের বিশ্বাসে। দেবতার সাথে যোগাযোগটাও  ঘোরে  বা অজ্ঞান বা ঘুমন্ত অবস্থায় বলেই দেখা যায়।  কারন বেশ অবিশ্বাস্য ঠেকলেও বলা হয় যে কিছু কিছু দেবতা অর্ঘ্য হিসাবে নেন মানুষের সাদা রক্ত বা কামক্ষরণ। জীববিজ্ঞান অনুসারে এই ক্ষরণের মধ্যে থাকে রক্ত কণিকার সমাবেশ। বলা যায় কামক্ষরণ শরীরে রক্তেরই একটা প্রকার।  এবং ঘুমের মধ্যে ইজাকুলেশনের সম্ভাবনা অনেক বেশি।  এর সাথে মনস্তত্বের একটা দারুন যোগাযোগ আছে। স্বপ্নতত্ত্বে এর আধ্যাত্মিক দিকের অর্থ হলো  স্বপ্নে ইজাকুলেশন কোন বিষয়ে চরম সিদ্ধান্তের আভাস।  

যাই হোক, এতেই শেষ নয়। সাইবেরিয়ান পুরাণকথা নিয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ও গাঁথা নিয়ে আসব আবার এর পরের পর্বে। ভালো থাকবেন সবাই।

দেবলীনার আগের পর্বগুলি পড়তে ক্লিক করুনঃ

বিশ্বমিথের দরবার– লিখছেনঃ দেবলীনা রায়চৌধুরী ব্যানার্জি

বিশ্বমিথের দরবার(পর্ব-দুই)-লিখছেনঃ দেবলীনা রায়চৌধুরী ব্যানার্জী

বিশ্বমিথের দরবারঃ(পর্ব তিন) কলমে-দে ব লী না   রা য় চৌ ধু রী   ব্যা না র্জি

বিশ্বমিথের দরবারঃ (৪র্থ পর্ব)–দে ব লী না রা য় চৌ ধু রী ব্যা না র্জি

বিশ্বমিথের দরবার(পঞ্চম পর্ব) কলমে-দে ব লী না   রা য় চৌ ধু রী   ব্যা না র্জি

বিশ্বমিথের দরবার(৬ষ্ঠ পর্ব) “সাইবেরিয়ান পুরাণকথা”

লেখা পাঠাতে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here