যে জন থাকে প্রানের মাঝে

0
28
পরিচিতিঃ সনৎকুমার বটব্যাল ও হরিপদ কেরানী ছদ্মনামে ২০১৫ সাল থেকে সম্পাদনা করে চলেছেন একটি মননশীল  সাহিত্য পত্রিকা ‘পৃথ্বী’। থাকেন তমলুকে। জন্মসুত্রে পুর্বমেদিনীপুরের মানুষ। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। হরিপদ কেরানী ছদ্মনামে দীর্ঘকাল লেখালিখি করে আসছেন। ২১/১১ তেঘরিয়া, নন্দনকানন, কলিকাতা-৭০০১৫৭। বাইফোকালিজম্-এ আজ একটু অন্য স্বাদের লেখা।

স ন ৎ কু মা র  ব ট ব্যা ল-র জীবনীচর্চায়

যে জন থাকে প্রানের মাঝে

আজ ভারতবর্ষের এক কৃতি সন্তান, স্বাধীনতা সংগ্রামী,শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক, গবেষক ও সেই সঙ্গে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বৈজ্ঞানিকের কথা আপনাদের বোলবো । ইনি হলেন

ডঃ বীরেশচন্দ্র গুহ

ভূমি স্পর্শ– ৮ই জুন,১৯০৪ সাল
অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহ,
ব্রিটিশ ভারত

অমৃতলোকে যাত্রা– ২০শে মার্চ,১৯৬২,কলকাতা, ভারত।

বাবা– রাসবিহারী গুহ

মামা– বীর বিপ্লবী অশ্বিনীকুমার দত্ত

স্ত্রী– ডঃ ফুলরেণু গুহ

ভারতবর্ষের সেই সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে ছিলেন এবং সেই সাথে সাথে নিজের জীবনকে এক অন্যমাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য বিদেশে গিয়ে ছিলেন। গবেষণায় বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উন্নিত হয়েছেন। সেইজন্য এই বিজ্ঞানীকে ভারতে প্রাণ-রসায়ণের জনক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। বীরেশচন্দ্র গুহর বাবার কাজের
যায়গা ছিল সেই সময়ের অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানের বাংলাদেশের) ময়মনসিংহে। গুহদের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের বরিশালের বানারিপাড়ায়। ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের উজ্জ্বল নেতৃত্ব বিপ্লবী অশ্বিনীকুমার দত্ত ছিলেন তাঁর নিজের মামা। সুতরাং তিনি বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবেন না তো কে হবেন। কলকাতার শ্রীকৃষ্ণ পাঠশালা থেকে ১৯১৯ খ্রীস্টাব্দে বীরেশচন্দ্র গুহ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে সিটি কলেজ থেকে আই.এসসি.পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু বি.এসসি. পড়ার সময় আসমুদ্রহিমাচলের নেতা মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অপরাধে ১৯২১সালে ননকলেজিয়েট হন। কলেজের খাতায় নাম কাটা পড়ে। পরে এক শুভানুধ্যায়ীর সহযোগিতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন ও ১৯২৩ সালে রসায়নে বি এস সি পাশ করেন।তিনি ঐ বছর স্নাতক স্তরে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন । ১৯২৫ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা তে ও প্রথম হন। ছাত্রাবস্থায় ঘোষ ট্রাভেলিং বৃত্তি লাভ করেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করাকালীন আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণা পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হন। এম.এসসি পড়ার সময় তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সংস্পর্শে আসেন। আচার্যের বিজ্ঞানের প্রতি অবদান, নিঃস্বার্থ আদর্শবাদ ও স্বদেশেপ্রেম পরবর্তীতে তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।
পড়াশোনা শেষ করে এক বছর বেঙ্গল কেমিক্যালস এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যালসে কাজ করেন।এর পর ১৯২৬ খ্রীস্টাব্দে ‘টাটা স্কলারশিপ’ পেয়ে বিলেত যান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি. এবং ডি.এসসি. ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ষাঁড়ের যকৃতের মধ্যে ভিটামিন বি-২ র অস্তিত্ব অনুসন্ধান। এরপর কেমব্রিজের বিখ্যাত প্রাণ-রসায়নবিদ এফ. সি. হপ্ কিন্সের অধীনেও গবেষণা করেছেন। স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ প্রবাসী ভারতীয়দের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৩২ খ্রীস্টাব্দে দেশে ফেরার পর কিছুদিন আবার বেঙ্গল কেমিক্যালস এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যালসে কাজ করেন।
১৯৩৬ খ্রীস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়ন বিভাগে প্রধান অধ্যাপকের পদ পান। ১৯৪৪ খ্রীস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে খাদ্যদপ্তরের প্রধান টেকনিক্যাল উপদেষ্টাপদে নিযুক্ত করেন। ১৯৪৮ খ্রীস্টাব্দে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের সভ্য হিসাবে কাজ করেন।
১৯৫৩ খ্রীস্টাব্দে পুনরায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন এবং আমরণ অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজে লিপ্ত থাকেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে গমবীজ থেকে ভিটামিন নিষ্কাশন, অ্যাস্কোরিক অ্যাসিড অথবা ভিটামিন- ‘সি’ বিষয়ে গবেষণা করেন। উদ্ভিদ কোষ থেকে ‘অ্যাস্কোরবীজেন’ বিশ্লেষণে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা মৌলিক কৃতিত্ব দেখান। ১৯৪৩ খ্রীস্টাব্দে বাংলার দুর্ভিক্ষের সময়ে ঘাস-পাতা থেকে প্রোটিন বিশ্লেষণের গবেষণা শুরু করেন এবং মানুষের খাদ্যে এই উদ্ভিজ্জ প্রোটিন মিশ্রণের নানা পদ্ধতি দেখান। মূলতঃ বীরেশচন্দ্র গুহর প্রয়াসে ভারতে প্রাণ-রসায়ন বিজ্ঞান ও জৈবপ্রযুক্তি বিদ্যার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। সেকারণে তাঁকে ভারতের আধুনিক প্রাণ-রসায়ন বিজ্ঞানের জনক (Father of modern Biochemistry in India) স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৪৪ খ্রীস্টাব্দে বিখ্যাত সমাজসেবিকা ও গান্ধীবাদী নেত্রী ড. ফুলরেণু গুহকে বিয়ে করেন। দুজনেরই সমাজ সেবা, সাহিত্য সংস্কৃতি, সঙ্গীত ও চিত্রকলার প্রতি অসীম আগ্রহ ছিল। তিনি কালিদাস, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শেক্সপিয়ার থেকে সংস্কৃত, বাংলা বা ইংরাজীতে কবিতা আবৃত্তি করে বন্ধু বান্ধব দের প্রায়ই শোনাতেন। বীরেশচন্দ্র গুহ ১৯৬২ খ্রীস্টাব্দের ২০শে মার্চ হঠাৎ ৫৮ বছর বয়সে লক্ষৌতে মৃত্যু বরন করেন।
১৯৭২ সালে ড.ফুলরেণু গুহের স্বামীর ইচ্ছানুসারে স্বপার্জিত অর্থ ও তাঁদের বালিগঞ্জস্থিত বৃহৎ বাড়ি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাণ-রসায়ন বিষয়ে গবেষণার জন্য দান করেন। বর্তমানে এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের “The Guha Centre for Genetic Engineering and Biotechnology “(GCGEB)হিসেবে খ্যাত। আজ এই মহামানবের জন্মদিন। শুভ জন্মদিনে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও আভূমি প্রনাম জানাই।

তথ্য সহযোগিতা ও অনুলিখনঃ
হিমাদ্রি বর্মণ
সৌজন্যেঃ– উইকিপিডিয়া

লেখা পাঠাতে পারেন

আগের পর্বগুলি পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিংকগুলোতে

যে জন থাকে প্রানের মাঝে

যে জন থাকে প্রানের মাঝে

যে জন থাকে প্রানের মাঝে

যে জন থাকে প্রানের মাঝে

যে জন থাকে প্রানের মাঝে

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here