সহজ মানুষ-সহজপাঠ(চৌত্রিশতম পর্ব)

0
163
ধারাবাহিক গদ্য পরম হংস শ্রীরামকৃষ্ণ,স্বামীজি ও মা সারদাময়ী-র মতাদর্শ ও দর্শনের অন্য আলো নিয়ে লিখছেন–নিমাই বন্দোপাধ্যায় “ঈশ্বর প্রসঙ্গে “— বিভিন্ন গ্রন্থে, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, -মুনি-ঋষিদের কথায়, বাণীতে,প্রনম্য বহু অবতারদের, লেখক -সাহিত্যকদের লেখায় ও কথায় যা পড়েছি এ যাবৎ– সে গুলিই সহজ সরল ভাবে এখানে একত্র করেছি মাত্র। এর কোনোটিই এ অধমের পূর্ণাঙ্গ সৃষ্টি নয়।বলা যেতে পারে ” ছায়া অবলম্বনে “। আমার মতো একজন অর্বাচীনের এ স্পর্ধা কেন ঘটল ঈশ্বরই জানেন।আমি জানিনা।” ঠাকুর -মা-স্বামীজী মহারাজের শ্রীচরণ স্মরণ করে এ লেখায় উৎসাহিত হয়েছি,একথা স্বীকার করতে আমার কোনো বাধা নেই। আমি নিমাই বন্দোপাধ্যায়, দূর্গাপুর থেকে বাইফোকালিজম্ ওয়েব পত্রিকার সম্পাদকের অনুরোধে এবং উৎসাহে প্রতিদিন কিছু কিছু লেখা নিয়েই – এই তৎপরতা

মহাভারতের গল্প (এক)

নি মা ই   ব ন্দো পা ধ্যা য় 

 

পান্ডব রাজের জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রীমান যুধিষ্ঠির। সততা ও শুদ্ধতার প্রতীক।গোটা মহাভারত কাব্যে তাঁর
মত বিচক্ষণ, সত্যবাদী, ন্যায়নিষ্ঠ চরিত্র, আর দ্বিতীয় টি খুঁজে পাওয়া যাবে না।ন্যায়, সত্য আর
ধর্মকে আজীবন ধরে ছিলেন এই প্রথম পান্ডব।
এগুলিকে নিজের জীবন চর্চায় সহজাত করে
নিয়ে ছিলেন বলে তাঁর এক বিশেষ দৃঢ় চরিত্র
গঠিত হয়েছিল। সেজন্য গোটা মহাভারতে তাঁকে
“ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির ” আাখ্যা দিয়েছিলেন এই মহা- কাব্যের রচয়িতা মহর্ষি ব্যাসদেব।

সেই “ধর্মরাজ” কে সামনে পেয়ে এক ‘যক্ষরাজ’
কিছু প্রশ্ন করলেন, যা প্রত্যেকের জীবনের কিছু
অমৃতময় কথা। যা সত্য আর অসত্যের জীবন
যুদ্ধের, মনোজগতের কথা।

আমরা এই জীবনে সর্বদা লড়াই করেই এগোচ্ছি।
জন্মের পর থেকেই লড়াই শুরু। বেঁচে থাকার
লড়াই। ধর্মের সঙ্গে অধর্মের, সত্যের সঙ্গে মিথ্যার,
ন্যায়ের সঙ্গে অন্যায়ের। হৃদয়ের সঙ্গে পাকস্থলীর। এই যুদ্ধই জীবন -যুদ্ধ। এই জীবন -যুদ্ধের প্রতীকী
যুদ্ধই কুরুযুদ্ধের যুদ্ধ। পান্ডবদের সঙ্গে কৌরবদের
লড়াই। পান্ডব কারা? পাঁচজন। পাঁচ ভাই। এরা
সংখ্যালঘু। ভালোর সংখ্যা সর্বদাই কম। হাতেগোনা। উদারতা ক্ষমা মায়া মমতা আর সহ্যশক্তি এই পাঁচটি গুন একসঙ্গে খুব কম সংখ্যক মানুষের চরিত্রে লক্ষ্য করা যায়। এরাই
পান্ডব।
      অন্যদিকে কৌরবরা সংখ্যায় একশত। এরা সংখ্যা – গুরু। কে নেই সেই দলে? হিংসা শঠতা ঘৃণা
অশান্তি অত্যাচার নীতিভ্রষ্টতা চতুরতা স্বার্থপরতা
এরা একশ ভাই। এদের নাম বলে শেষ করা যাবে না।

এটি মহাভারতের বনপর্বের প্রায় শেষ অধ্যায়ের
ঘটনা। অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক অত্যাচার করে
কৌরবরা রাজধানী হস্তিনাপুর থেকে পান্ডবদের
তাড়িয়ে দিলেন। নিরাশ্রয় হয়ে নিরাপত্তার অভাবে
লুকিয়ে , পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পান্ডবরা। রাজপুত্রদের কী দূর্ভাগ্য! আর কী অপরিসীম দূর্দশা!

         প্রিয় পাঠক, যদি আর একটি মহাকাব্য –রামায়ণের দিকে, একবার দৃষ্টিপাত করেন তাহলে দেখবেন একই ঘটনার রকমফের। দশরথপুত্র শ্রীরামচন্দ্র, যাঁর দেবতার অংশে জন্ম, তিনি ও বিমাতার চক্রান্তে রাজ্যহারা। রাজধানী
অযোধ্যা ছাড়া। ” মর্যাদা পুরুষোত্তম ” যাঁর
বিশেষণ – তিনি বনবাসী। তাঁর মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত।
বনে বনে ঘুরে জীবন কাটাচ্ছেন, এক দুদিন নয়,
পুরো চৌদ্দটা বছর।

    মহাভারতে পঞ্চপাণ্ডব, পাঁচ ভাই, সঙ্গে দ্রৌপদী।
রামায়নে রাম- লক্ষ্মণ, দুই ভাই সঙ্গে জনকনন্দিনী
সীতা। রামায়ণে পিতৃসত্য পালনের স্বার্থে, পিতার
সম্মান রক্ষার দায়ে,বিমাতার কপটতার ঘৃণ্য
চক্রান্তে বিপর্যস্ত শ্রীরামচন্দ্র।
অন্যদিকে, সম্পত্তি, টাকা পয়সা, রাজপ্রাসাদ
আর রাজ্যের ভাগ দিতে অস্বীকার করে ; ছলে
বলে কৌশলে রাজ্য থেকে বিতাড়ন। কাকে?
“ধর্মরাজ” কে। সঙ্গে সেই সময় কালের বিখ্যাত সব বীর যোদ্ধাদের। এমনকি দৌপদীকেও।
শুধু তাই নয় – সঙ্গে যতুগৃহে পুড়িয়ে মারার মারাত্মক ষড়যন্ত্র, তাতে পান্ডবরাও দিশেহারা
কিংকর্তব্যবিমূঢ়!

মিথ্যে চক্রান্ত, সম্পত্তির লোভে সর্বসান্ত করে
সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া, নারীত্বের অপমান,
লাঞ্ছনা, গোপনে পুড়িয়ে মারা – সেই রামায়ন –
মহাভারতেরর কালেও ছিলো, এবং আজও
এগুলো সমান ভাবেই ঘটে চলেছে। সমান
প্রাসঙ্গিক।” সেই ট্রাডিশন সমানে চলে আসছে। “

তাই যক্ষরাজের প্রশ্নগুলি আমাদের শোনা উচিত। মন দিয়ে শোনার দরকার। কাহিনীকার
যক্ষের মুখ দিয়ে কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন
আমাদের মত সাধারণ মানুষদের শিক্ষা দেবার
জন্যে।

শোনা যায়, যক্ষরাজ তার দিঘীর জল পানের
দোষে,অপরাধে, পান্ডবভাইদের সকলকেই প্রানে
মেরেছিলেন দিঘীর জলের মধ্যে ” সেঁকো বিষ”
মিশিয়ে দিয়ে। যা মারাত্মক রকমের বিষাক্ত।
শুধু ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির সেই সময় সেখানে উপস্থিত
ছিলেন না বলে প্রানে বেঁচে যান।

বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে ভাইরা সব কোথায়
নিখোঁজ হয়ে গেল, সেজন্য যুধিষ্ঠির খুঁজতে
খুঁজতে চিত্রকূট পর্বতের ওপর সেই বিশাল জলাশয়ের পাড়ে এসে উপস্থিত হলেন। আর
এসেই আশ্চর্য হয়ে দেখলেন চারটি পর্বতের মত
তাঁর চারভাই ভূলুণ্ঠিত। কুরুকুলের রাজপুত্রদের
এমন মর্মান্তিক ভাবে দেখে তিনি শোকাকুল হয়ে
আর্তচিৎকার শুরু করলেন। মস্তকে করাঘাত করে –“হায় হায়! পান্ডব বংশের কীর্তিধারী
বীর যোদ্ধাদের এ অবস্থা কে করলে? ” বলে
আর্তনাদ করতে লাগলেন ধর্মপুত্র।
— ” আমি করেছি। আমার নিষেধ অমান্য করে
তোমার ভাতৃ চতুষ্টয়, আমার অধিকৃত এই জলাধারের জল পান করেছিলো, তাই মেরেছি। “
—-” কে তুমি ? কী তোমার পরিচয় “? ধর্মরাজ
জিজ্ঞেস করলেন।
— “তুমি যেমন ধর্মরাজ ; আমি ও তেমন যক্ষরাজ। যক্ষ, পিশাচ, ভূত, প্রেত,অশরীরী – এদের রাজা। মহারাজা।” উত্তর এলো আড়াল থেকে।
—-” তুমি নিজেকে রাজা বলে পরিচয় দিচ্ছো?
তৃষ্ণার সময় যে জল পান করে, তার প্রান নেওয়া কী রাজার ধর্ম? এ কাজ কী রাজার শোভা পায়? ছি:, ছি:, ধিক তোমাকে ! এ তোমার কেমন
অনাচারের, অধর্মের রাজ্য? আর সেই রাজ্যের রাজা বলে বুক ফুলিয়ে প্রচার করছো? ছি:… “

    যক্ষরাজ বললে, ” শোনো ধর্মরাজ, তোমার ক্রোধ সংবরণ করো। আর আমার কয়েকটি সহজ ও ঐতিহাসিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর দাও। যদি সফল হও, তাহলে তুমিও জল পান করতে পারো। ”
— “আমি মোটেও তোমার জলাশয়ের জল পান
করতে আগ্রহী নই। আর তাছাড়া আমি তৃষ্ণার্ত ও
নই। ”
    তখন যক্ষরাজ বললে, ” সব প্রশ্নের, সঠিক উত্তর দিতে পারো যদি, তাহলে তোমার ভাইদের প্রানও ফিরিয়ে দেব আমি। সুতরাং আর ক্রোধ নয়।শুনেছি তুমি বীর। এবার আমার প্রশ্নের উত্তরের জন্য প্রস্তুত হও।”

চ ল বে…

লেখা পাঠাতে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here