লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল-এর কবিতাগুচ্ছ

10
552

 লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল-এর কবিতাগুচ্ছ
     

                                     

                      খয়েরী রঙের সমীক্ষা 
                 —————————-

                                                           ছবিঃ গৌতম মাহাতো

এক.

ছাই উড়ছে শরীরের বলিরেখা ঘিরে , আর কিছুদিন পরেই আড়চোখের দৃষ্টিতে বসবে কলঙ্কের ছাপ ।  মগ্নতা থেকে  সুশীল পুরুষের দিক পরিবর্তনের ছবিটা কেটে যারা ঘুড়ি ওড়াবে তারাও ক্লান্তি ঘোঁচাতে হাত উঁচিয়ে হাই তুলছে চৌরাস্তায় ।  মুক্তবেণির  মেয়েটি পান’এ আদা মেশাতে মেশাতে বাতাসের তাপ মাপছে  –  পাশেই ট্যাপ খুলে পড়ছে জল । তাদের কোনো বিকার নেই , নরেন্দ্রও কেমন বরফ খুঁজছেন  – এটা তার ভান হতে পারে , তবে কোন নৌকাবিহার নাই ! মফসসলের শরীর 
পুড়ছে ,  আর কালো কালো ঘুর্ণির ঘুর্ণনে ঘুরছে জামা 
প্যান্ট শাড়ি ব্লাউজ ,  রাগছেন  বাগ্মী মমতা ।  বৈরাগ্য কোথায় কে জানে  – 

দুই.

বিকেলের চালায় গাল ঠেকিয়ে থাকার দৃশ্যতে হার মানে পশ্চিমের রং । মশগুল তার ক্লান্তিতে দুদলের কাঁটাতার।  যারা দিন ফিরিয়ে দেবার জন্য মিছিল করে তার সাথে বিরোধী দলের কোন পার্থক্য নেই  – সকলের ইস্তাহারে ঘুমন্ত রাত্রি অবোধ্য।  তবু হাওয়ায় ফোলা খয়েরী ঠোঁট  জামফলের মতো রসাল , যেন ছায়া কেঁপে ওঠা এই  ভূগোল , আর সঙ্গমে উন্মুখ লাঠি সোটা বন্দুক ।  ঠিক ঠিক  রাঙাদ্বীপের কাহিনী । এই বুঝি ফিরে ফিরে আসে চাপ চাপ রক্ত  –  জঙ্ঘা বেয়ে দক্ষিণে মেঘদলে – 

তিন.

আরও আটকে রেখো সহজ কোমর পেঁচিয়ে রাখা শাড়ি , অথবা জটিল হও পালাগানের সহচরী ।   এই জংলিপনাতে কিছু সময় তো দাও  – যেখানে দৌড়ে দৌড়ে হৃদয়টা বেড়ে যেতে পারে জঙ্গলের পরিধি  মতো –  এই জৈষ্ঠ্যে  দম বাড়াতে পারলেই  সাপুড়েরা বুঝে নেবে মিথ্যে রানীর গন্ধ ।  যতই উড়ুক্কু সাপ হোক এক্সিট পোলের সংখ্যা গুলো পেরোতে পারবে না আর  –  

চার.

কারও কোন খুঁত নেই এমন ঠাট্টা না করাই ভালো  –   তুবড়ানো গালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কলপগুলো জ্বলজ্বল করছে ত্রিফলা বাতিতে ।  চাপা দিতে চাইলেও দগদগে সাদা দাড়ি ভেসে ওঠে রোড শো’র আলোয়  – কারা যে হাত নাড়ে নিজের খুলির ভিতর?  
অবিরাম জলপড়ার শব্দে নাচে নন্দলালা  – মাখন চুরির অভিজ্ঞতায় নাড়তে থাকে হাতের নাড়ু ,  টোপ খাওয়া রোদে উপচে পড়ে গ্লাসের টলটলে মদ  – 
তখনই মুখোসের দিকে তাকাও  – অস্বীকারের ঢেউয়ে যে মদের দোকান গুলো ভেসে আসে ,  ঠিক তেমনই কোন একদিন ওদের আলাপ  –  সেগুলোই এলেমেলো করে দেয় নিজস্ব আমবন  – কপালের কাটা দাগে ফুটে ওঠে বিপন্নতা – 

পাঁচ.

মনিকে একটা হাতলহীন ছুরি মনে হয়   
কোমরে শাড়ি না জড়িয়েও সাপের মত হেঁটে বেড়ায় রাস্তার ফ্যাসানে –  
চামড়ায় ট্যাটু করার ইচ্ছে আছে একশ ভাগ,  সে-কারণেই ভোটের দিন গুলিতে সে অমোচনীয় কালিতে 
মিশিয়ে দেয় পুরুষের জিব 
তাই নখের আঁচড় ফুটে উঠেছে শিৎকার লিপিতে  
রোদের কাছে কোনো লজ্জা নেই – করতে নেই , 
যত ঘোমটা থাক না কেন মিছিল আর খাওয়া দাওয়াতে 
আঙুল গুলো সমুদ্র কাঁকড়া  – সমুদ্রে যায় আর গর্তে ঢুকে পড়ে  
এঁকেবেঁকে ফাঁকা নাভিশ্বাস ধরতে চাওয়া না চাওয়ার কাছে , 
তাতে লেগে থাকে নত মুখের মৃদু হাসি  

অব্যক্ত আড়াল গেলেই হাতের কাঁদালে দাঙ্গা লাগে – 

ছয়.

এত হই-হুল্লোড়ের পর যে যার চালার নিচে ফিরছে। হাত ধুচ্ছে  পা ধুচ্ছে  মুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছে  – সেখানেও কী মুখোশ পরে রাখার দরকার পড়ে  বুঝি না –  তবুও পরে আছে সুর তাড়ানো পুরুষেরা  
জলপড়ার শব্দে  চমকে ওঠে শিরদাঁড়া , পুরনো মেঘের সাথে কাটা ডালপালাগুলি রোদ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে  আড়ালে – ঝিলিক দিয়ে উঠছে টোপ খাওয়া রোদ আর 
ওষুধের দোকানে কাঁচুমাচু মুখ – কোন হিসেব নেই গলগণ্ডের ।  বদলে দিচ্ছে গলার গামছার সাথে বিছানার চাদর  – 
ভিটের কাছে সর্ষে ফুলে জুয়া পোকার শোকানুভুতি  – আবারো কারো চুলের গন্ধ উড়তে উড়তে টুকরো হচ্ছে নদীর গতি  – স্নানের পর ব্লেডের টুকরো গুলো হারিয়ে ফেলে ক্ষত মুখ –  

সাত.

অনেকটা পথের পরও খেয়াঘাট পাইনি  – শুধু ধারে ধারে পক্ মিল আর গাঁথনি বিহীন ইটের ঘর – আর ঝোপ ঝোপ টাকা কামানোর ফাঁদ ।  ইতিহাস জানে এ কখনো মহেঞ্জোদারো হতে পারবে না । তবুও কিছু কিছু  সাবওয়ে  ঢুকে যায় সেই ঘরের ভিতর  – আর সেপারে যাওয়া যাবে না  – আর সেপারের তাল গাছের বাবুই আসবে না  – এখানে চলছে গুমোট হাওয়ার মাঝে শাড়ি খোলার শব্দ ,  আর ক্লীভেজ বেয়ে আসছে দরদরে ঘাম  – কুপিটা নিভে যেটুকু নিশ্বাস আসে তাকে জীবন বলেই জানে পার্থ  – তারও হাতে সাদা জলের বিকৃত স্বাদ । 
চোখ বুজে আসলেই চাঁদ ছুঁয়ে দেয় চোখের পাতা  – বুকের লোমে নোনা স্বাদ  – এবার কি চিমনি দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ধোঁয়া  নেমে আসবে নদীর জলে ? 
এবার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে ভেষজপাতার কল্লোল  – কারা যেন শিস দেয় সূর্যাস্তের গায়ে  – কারা যেন হেঁটে যায় দিগন্তের বিপক্ষে  – আলো ভাসে – ছায়াও ভাসে । ওপারে যাওয়ার কোন খেয়া ঘাট নেই  –  

আট.

মৃত্যুর আগে ওগো নীল পাতার ধ্বনি  – ঝিকমিক করে ধর্মখুন –  অতীত এসেছে হত্যার জন্ম নিয়ে ।  অস্তহীন দিন দিন খরার মাঝে  সদর দরজা খোলা আছে ,  সুড়ঙ্গ ভেঙে যত কিছুই দেখি রোজ  – নিজেকে পোড়াচ্ছে  রাতের  শাখা , যেন নিদ্রার  নিচে এক ক্লান্ত কাক –  বসে – সময় পেরিয়ে  যেতে যেতে কোথায় যেন যায়  ।  তারপর  উধাও চিন্তামণি । তারপর হাজার বছর সেই অস্থিরতা  – গোপন সংক্রমণে ছেয়ে যাচ্ছে সমস্ত বসবাস – এ কাজ কারও নয়  – এ কাজ  যন্ত্রণারও নয় , একটি খাঁচার ভিতর দুর্লভ মাংসপিণ্ডের মতো ভালোই তো আছি  । নিকটে প্রাণযোগে প্রাণ রাখতে গিয়ে সবুজ ঘাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে  থাকে সংক্রমণ , যেভাবে কুকুরটি লালা ঝরাতে থাকে  – যদিও দূরে মঞ্চের নিচে অন্ধকার মাথাগুলো – জন্মের ভেতর শিখে গেছে জিভ লুকোতে 

                               ★★★

Leave a Reply to Medewave Cancel reply

Please enter your comment!
Please enter your name here