স্বপ্নধারার পর্বকথা(২য় পর্ব) কলমেঃ শু ক্তি   চ ট্টো পা ধ্যা য় 

2
192
শুক্তি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করে এখন নিভৃতেই তাঁর লেখা-লিখি নিয়েই ব্যস্ত। ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন সাহিত্য পত্র পত্রিকার সাথে। লিখেছেন বাস্তবের আলোকে দেশ-বিদেশের পুরাণের বিভিন্ন কাহিনী ও বেশ কিছু কবিতাও। এছাড়াও শুক্তি যুক্ত “জিজীবিষা” নামক লিটল ম্যাগাজিনের সাথে। সেখানেও তাঁর নিয়মিত লেখালেখি। নাচ তাঁর ভীষণ প্রিয় এছাড়াও শুক্তির ছবি আঁকা ও ফটোগ্রাফি নিয়ে অগাধ আগ্রহ।আজ থেকে প্রতি সপ্তাহে বাইফোকালিজম্-র পাতায় থাকছে তাঁর এই ধারাবাহিক।

স্বপ্নধারার পর্বকথা(২য় পর্ব)

কলমেঃ শু ক্তি   চ ট্টো পা ধ্যা য় 

ছবিঃ অন্তর্জাল

বন্ধু্রা, আবার চলে এলাম এই সপ্তাহে আপনাদের সাথে “স্বপ্নধারা”র দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে। সেদিন এক আজব স্বপ্ন দেখলাম জানেন। হঠাৎ দেখছি, আমি মাধ্যমিক পরীক্ষার হলে বসে আছি। আর সেদিন অঙ্ক পরীক্ষা, অঙ্ক আর কিছুতেই শেষ হচ্ছে না, আর সেই কারণে কিছুতেই খাতা আর জমা দিতে পারছি না দিদিমনিকে। যথারীতি ভয়ের চোটে ঘেমে নেয়ে উঠে বসলাম। ওমা! কোথায় অঙ্ক খাতা? আর কোথায়ই বা পরীক্ষার হল? তাকিয়ে দেখি ভোর হয়ে গেছে, মিষ্টি একটা পাখির ডাক ভেসে আসছে জানলা দিয়ে। মাধ্যমিক দিয়েছি সেই কত বছর আগে,তবুও সেই কথা(বলা ভালো trauma) মাথা থেকে যায়নি।
আসলে তা নয়, আমাদের মনটাই এরকম। মাথার ভিতর কত কোটি স্মৃতি যে জমা থাকে,তার হদিশ বিজ্ঞানীরাও পান নি। আমার অবচেতনেই হয়তো আমি সেই নিয়ে কোনোসময়ে ভেবেছিলাম,অচেতন(Unconcious mind) অবস্থায় যার প্রতিফলনই হল ঘুমের মধ্যে আমার দেখা এই স্বপ্নটি। মানুষের মন, যে কথা থেকে কোথায় উড়ে চলে,তা বলা মুশকিল। পৃথিবীর সবচেয়ে গতিশীল হল মানুষের মন, যা আলোর থেকেও তীব্র। আগের পর্বেই বলেছি, স্বপ্ন কি, বা কেন স্বপ্ন আসে। সাথে দেখেছি আমাদের মনের তিনটি ভাগের কথা, তাদের কাজের কিছু ধরন, আর জেনেছি অচেতন মস্তিষ্ক স্বপ্ন দেখায়। আমরা সাধারনত খারাপ স্বপ্ন, বা স্বপ্নে অদ্ভুত জাতীয় কিছু দেখলে, সকালে উঠেই আগে ইন্টারনেটে তার কারণ খুঁজতে বসি। অনেকসময় তার কিছু ব্যাখ্যা আমরা পেয়েও যাই, আবার কিছু পাইনা। আজ আসুন দেখে নিই,এই বিভিন্ন ধরনের স্বপ্নের কারণ কি বা কতো ধরনের স্বপ্ন হয়। শুনে অবাক লাগছে না? চলুন একটু explore করা যাক।


আপনারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন যে, মানুষ যখন ঘুমোয় তখন সে একটি ঘোরের মধ্যে থাকে। যদিও আমরা ঘুমোই, কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক আসলে কিছুটা সজাগ অবস্থায় থাকে। তার ফলে আমরা ভাবনাচিন্তা করতে পারি, বিভিন্ন ছবি কল্পনা করতে পারি, এবং শুনলে অবাক হবেন আমরা বিভিন্ন গল্প বা ঘটনা কল্পনাও করে নিতে পারি। এই ছবি,ঘটনা ইত্যাদিই স্বপ্ন। স্বপ্ন অনেক সময় মজার যেমন হয়, তেমনি হয় আতঙ্কেরও। একটি রিসার্চে দেখা গেছে, ৬৫% সময়ে আমাদের স্বপ্ন হয় সেই বিষয়ে যেগুলোতে আমরা খুব বেশি জড়িত থাকি। অর্থাৎ, আমরা জাগ্রত অবস্থায় যেসব কাজ করি, যাদের সাথে কথা বলি, বা যে ভালো বা মন্দ ঘটনার সম্মুখীন হই সেইগুলো নিয়েই স্বপ্ন দেখি।
অনেক সময়ই আমরা দুঃস্বপ্ন দেখি, যা আমাদের মনের উপর বেশ প্রভাব ফেলে। প্রত্যেকটি মানুষই কোনো না কোনো সময়ে দুঃস্বপ্ন দেখেই থাকে। রিসার্চে দেখা গেছে,মানুষের জীবনের বিভিন্ন অপ্রিয় ঘটনা অনেকসময়ই দুঃস্বপ্ন রূপে দেখা দেয়। এছাড়াও আছে, আরও বেশ কিছু কারণ। আমরা ঘুমের আগে যদি কিছু ভয়ের গল্প পড়ি, বা দেখি, বা আমরা যখন অসুস্থ থাকি, সেই দুর্বল মুহূর্তের অসহায়তা অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দুঃস্বপ্নের কারণ হয়। ঘুমের ব্যাঘাত অথবা খুব কাছের কোনো মানুষকে হারানো বা হারানোর ভয়ের থেকেও দুঃস্বপ্ন আসে। আর আসে অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়া বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রূপে। তবে এছাড়াও ডাক্তার ও মনোবিদরা Depression বা মানসিক অবসাদকেও এর একটি কারণ বলে মনে করেন। যেসব মানুষ সারাদিনে প্রচুর স্ট্রেসফুল কাজ করেন,যারা মানসিক অবসাদে ভুগছেন, বা যাদের Anxiety Disorders আছে,এবং ৭১% মানুষ যারা Post Traumatic Stress Disorder এর শিকার তাঁরা দুঃস্বপ্ন অন্যদের তুলনায় বেশি দেখেন। এঁরা সাধারনত মৃত্যু, শারীরিক হেনস্থার দৃশ্য, বা হয়তো দেখেন, তাদের কেউ তাড়া করেছে, প্রাণ বাঁচাতে তাঁরা ছুটে চলেছেন এই ধরনের অস্বস্তিকর কিছু চিত্র।


স্বপ্নগুলি প্রতীকী, মানে কিছু স্বপ্নের কিছু symbolic significance আছে। অনেক মানুষই জলের স্বপ্ন দেখে, এটা একটা প্রতীক রূপে কাজ করে, It means, somewhere in his mind, the person is feeling some insecurities, and as a result he is dreaming of water. আসলে মাতৃ গর্ভে মানুষ Amniotic fluid এ ভাসমান অবস্থায় থাকে, এবং সহজাত প্রতিক্রিয়ার জন্যই সেখানে সে নিজেকে অত্যন্ত সুরক্ষিত মনে করে। সেই ধারনা তার সারাজীবনই হয়ত অবচেতন ও অচেতনে থেকে যায়। যার ফল স্বরূপ, সে যখন কোনো নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তখন অজান্তেই সে জলের স্বপ্ন দেখে। কারণ কোথাও না কোথাও তার মনের গভীরে তার মাতৃগর্ভের সেই স্মৃতির অস্তিত্ব থেকে যায়, এবং নিরাপত্তা পেতে সে, তার জীবনের সবচেয়ে নিরাপদস্থানে ফিরে যেতে চায়। তাই সেই মানুষটি জলের স্বপ্ন দেখে।
অনেকে ঘুমের মধ্যে সাপের স্বপ্ন দেখেন। এটিও symbolic, প্রাচীন mythology বা পুরাণে বা বাইবেলেও এইরকম স্বপ্নের উল্লেখ আছে। সাপকে বিভিন্ন প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আসলে সাপ একটি বিষাক্ত সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। সে মাঝে মাঝেই খোলস ছাড়ে এবং যেটিকে rebirth বা পুনরুজ্জীবন রূপে কল্পনা করা হয়, কিছু দেশে ও তাদের সংস্কৃতিতে। কিন্তু কিছু দেশে বা তাদের সংস্কৃতিতে এটিকে devil বা evil রূপে দেখা হয়। মনোবিদ Loewenberg এর মতে,“Just as you would not ignore coming across a snake in real life, neither should you ignore your snake dreams. There is either a poisonous element in your life that you need to get rid of, or there is healing you need to recognize. Either way, acting upon the message or warning is a very good thing to do.”
আমরা অনেক সময়ই আমাদের কর্মক্ষেত্রে বা জীবনের কিছু কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাই, সেই সময় কিছু মানুষের সাথে আমাদের পরিচয়ও ঘটে, যাদের সান্নিধ্য আমরা বিশেষ পছন্দ করতে পারিনা। তাদের হাবভাব, চলাফেরা, কথার ধরন হয়তো কিছু সময়ে আমাদের বেশ অপছন্দ হয়, যার প্রভাব আমাদের অবচেতনে ছায়া ফেলে এবং ফলস্বরূপ কেউ এই ধরনের স্বপ্ন দেখে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সাপ যৌনতা,বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক। আমরা সবাই বাইবেলের আদম(Adam) বা ইভের(Eve) গল্প জানি। Satan একটি সাপের রূপ ধরে ইভকে প্রলোভিত করে, Forbidden Fruit বা আপেলটি খেতে। যেটি খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এখানে Satan সাপের রূপ ধরে এসে, বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। যে মানুষ এইধরনের স্বপ্ন দেখেন, হয়তো তার জীবনে এরকম ঘটনা ঘটেছিল, বা ঘটছে, যার প্রতিফলন হচ্ছে তার এই স্বপ্ন।


অনেকে আবার স্বপ্ন দেখেন, যে তিনি অনেকের মাঝে বিবস্ত্র অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন, এবং অনেক চেষ্টার ফলেও তিনি সেই অবস্থা থেকে বেরোতে পারছেন না। ভেবে দেখুন তার পক্ষে সেই সময়টা (স্বপ্নের মধ্যেও) কি মারাত্মক traumatic হয়। এই স্বপ্ন দেখার অর্থ, তিনি নিজের প্রতি একেবারেই আত্মবিশ্বাসী নন। Self-confidence এর চূড়ান্ত অভাব ও social anxiety এইধরনের স্বপ্ন দেখার কারণ। হঠাৎ দৌড়তে দৌড়তে পড়ে যাওয়া, বা কোনো গভীর গর্তে পড়ে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, এই ধরনের ঘটনা অনেকের সাথেই ঘটে থাকে। কিন্তু জানেন কি, এর মানে হল, সেই মানুষটি হয়তো তার জীবনের কোন কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, হয়তো তার জীবনে চলা ঘটনাগুলিকে তিনি যথা সম্ভব সঠিক করার চেষ্টা করলেও তা সঠিক পথে চলছে না। হয়তো সেই মুহূর্তগুলো হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। হয়তো কাছের কিছু মানুষ অনেক দূরে চলে যাচ্ছে, বা জীবনটা অন্য খাতে বইতে শুরু করছে, যা তাঁর কল্পনার বাইরে আর সেটিই দুঃস্বপ্নরূপে দেখা দিচ্ছে।
উঁচুতে উঠলে কার কার ভয় লাগে? বা ধরুন জলের কাছে আপনি গেছেন, কিন্ত তারপরেই মনে হয়েছে, একবার যদি পড়ে যাই, আর বাঁচতে পারবনা। কোনো বদ্ধ জায়গায় কখনো অনিচ্ছাকৃত আটকে পরেছেন কোনোদিন? তার ফলে কি আতঙ্কের সঞ্চার হয়েছিল আপানার মনে? এই যে আমি বলছি, অনেকেই আমার কথার সাথে relate করতে পারছেন, তাই না? জানি, এই রকম কিছু আতঙ্ক আমাদের প্রত্যেকের থাকে। আসলে এগুলো Phobia ছাড়া কিছুই না। Acrophobia(উচ্চতায় ভয়) ,Arachnophobia(মাকড়শা বা spider এ ভয়), Autophobia(একাকিত্বে ভয়), Claustrophobia(দমবন্ধ করা পরিবেশ বা বদ্ধ জায়গায় আতঙ্ক) ইত্যাদি মনোবিজ্ঞানিরা এরকম প্রচুর Phobia’র হদিশ পেয়েছেন। এই Phobiaগুলো অনেক সময় মানুষের Nightmare বা দুঃস্বপ্নের কারণ হয়।
আজ তো কথা হল দুঃস্বপ্ন নিয়ে,মনটা কি একটু ভারি হয়ে গেল? কিন্তু interesting লাগল কিনা বলুন? আচ্ছা, কথা দিচ্ছি পরের পর্বে নিয়ে আসব মন ভালো করা কিছু ভালো স্বপ্নের কথা, আর Mythologyতে স্বপ্ন কীভাবে পাওয়া যায় সেই গল্প নিয়ে। আজ আসি। সবাই ভালো থাকবেন, আর সুস্থ থাকবেন। আর মনে রাখবেন এই পরিস্থিতিতে আমাদের মন ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদেরই। আমাদের মন ভালো থাকলেই ভালো ভালো স্বপ্ন দেখব আমরা। কারণ,বন্ধুরা আমাদের এখনও একসাথে অনেকটা পথ চলা বাকি, তাই না…

শুক্তির আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

https://www.bifocalism.com/dream-the-oneirology-by-sukti-chattyopadhyay/

 

লেখা পাঠাতে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here