পর্ব-২০ মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথাঃ শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী-র

0
19
    পর্ব-২০

শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী

চন্দ্রকোনার হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাস নিয়ে                         
           মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা

                                                             ছবিঃগৌতম মাহাতো

                                  পর্ব-২০

                                 বিদ্রোহী বহ্নি

                       রাজা ছত্র সিংহের শেষ পরিনাম
                        ও  মেদিনীপুরের পটুয়া শিল্পী
                            শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী
                                     

রাজা ছত্র সিংহকে রাজ্যচ্যুত করা হয় এবং ১৮১৭ খ্রীস্টাব্দে ১১ ই এপ্রিল থেকে তাকে বৃত্তি দেবার জন্য বার্ষিক ৬০০ টাকা ইংরেজ সরকার মঞ্জুর
করেন। এভাবে কিছৃদিন বৃত্তি ভোগ করে১৮২৫ খ্রীস্টাব্দে ২৫শে মে তিনি মারা যান।
‘স্বাধীনতা সংগ্রামে মেদিনীপুরের পটুয়া’নামক
প্রবন্ধের লেখক পরম বন্ধু জ্ঞান তপস্বী অধ্যাপক
সুহৃদ ভৌমিক মহাশয় তাঁর এই প্রবন্ধে ভারতের
স্বাধীনতা সংগ্রামে দরিদ্র পটুয়া শিল্পীদের অবদানের অনেক মুল্যবান তথ্য পরিবেশন করেছেন। তার ভাষাতেই বলি, চলমান লোক
সংস্কৃতির কাল থেকে বিলুপ্ত প্রায়। সাহেব পটের
গানকে আবিষ্কারের পশ্চাতে আর এক সাহেবের
অবদান আছে। তিনি হলেন অন্যতম ভারত
তত্ত্ববিদ  অধ্যাপক ডেভিড জে.
ম্যাক্ক্কচন, এই ভারত দরদী পুন্যশ্লোক ছিলেন
“The Patuas & The Patuas songs of Bengal” এবং পাণ্ডুলিপির লেখক। সাহেব
পটের গানগুলি  ম্যাক্ক্কচন সাহেব ও অধ্যাপক
ভৌমিকের প্রচেষ্টায় তমলুক মহকুমার নানকাচক
গ্রামের শ্রী যুক্ত মতিলাল চিত্রকরের নিকট হতে
১৯৭০ খ্রীস্টাব্দে ২৮/২৯ শে মার্চ তারিখে উদ্ধার
করা হয়। ৪২ এর আগষ্ট বিপ্লবের সময় পটুয়া
শিল্পীদের উপর নানান অত্যাচার  হয়। তার জন্য ই
গানগুলি বিকৃত রূপ ধারণ করে। ডেভিড সাহেবের
ভাষায় ইহা Corrupt । লেখক এই গানগুলি বন্ধু -বর অধ্যাপক সুহৃদ ভৌমিক মহাশয়ের নিকট হতে
সংগ্রহ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে গানগুলি এখানেরই
‘ নায়েক বিদ্রোহের’ ঘটনা।

                   সাহেব  পটের গান

বারোজন সিপাই বন্দুকের সঙ্গীন আওয়াজ করতে করতে চলেছেন। সিপাইদের নাম কি? থানা সিং,
মান সিং, হড়বড়  রায়, গড়বড় সিং, ফেনখাতকা
মদন সিং, ছুঁচে খাঁ, হাড়লি খাঁ, মো  খাঁ। সাতজন
 সাতজন সাহেবের নাম কি? রিপোর্ট, সিপোর্ট,
কালপোর্ট, মেজর, সেজর,ডাক্তার, কালেক্টর।
সাতজন সাহেব রাহাটি চলেছেন। পোদ বসানোর
ডান্ডি কিনি সাহেব। উনি কি কাজ করছিল? সদর
ঘাটে বণিক তৈরি করে তুত পাত কিনে তসর কাপড় আমদানি করেছিলেন। ঘাটা নিমকোর বালুর সাহেব উনি কি কাজ করেছিল – নতুন কোট
কবালা তৈরী ক’রেছিল।  কবালা না হ’তে আড়ি লাখ টাকার কাগজকে উনানে পুড়িয়ে বিলাতকে
লেখন করেছিল। লেখক প্রমাণ চোদ্দ কম্প গোরা
এনে ধূমা-ধূম ধূমক্ষেত্র। টিপু বাবুর কিল্লাতে লড়াই
লেগে দিয়েছিল। নিমকোর চটি সাহেব উনি কি কাজ করেছিল? ঘোড়ার ল্যাজে কানে বাতাস লাগাতে ল্যাজ কান কেটে দিয়েছিল। আপনার
পেটে পিলার হতে আপনি ছুরি মেরে দিয়ে দিয়েছিল। এমনি হারামজাদা সাহেব ছিল। উহার
দেবানন্দ ছিল দানী চন্দ্র শেখর ঘোষ। উনি মরে
গিয়ে গঙ্গায় দান করেছিল। ব্যাতা-বাগড়ীতে চোরের হাঙ্গামা হয়েছিল। নিতাই সিং দারোগাকে
সঙ্গে নিয়ে বেতার জঙ্গল ঘেরে যাঁহাতক চোরকে ধরে- এক খাতা, দু খাতা, তিন খাতা হুগলি মেদিনীপুর, ক্যালকাটা চালান  করে দিয়েছিল।

                                                           ক্রমশঃ…
                   ★★★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here