চন্দ্রকোনার হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাসঃ শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী

0
34
পর্ব-১৯

শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী-

চন্দ্রকোনার হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাস নিয়ে                           
           মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা

                                  পর্ব-১৯

                                বিদ্রোহ বহ্নি

মেদিনীপুরের পুরাতন জেল খানায় ফাঁসী দেওয়ার অশ্রু সজল কাহিনীঃ
                 লিখেছেনঃ- শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী

                                   
মেদিনীপুরের প্রাচীন কেল্লার মাঠ আজ লোকে লোকারণ্য। বালক-বালিকা, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা
দৌড়ি করিয়া ফাঁসী দেখিতে যাইতেছে। মাঠের একস্থলে কয়েকটা ফাঁসী কাষ্ঠ প্রোথিত হইয়াছে।
ফাঁসী কাষ্ঠের অনতিদূরে প্রায় ত্রিশজন ডাকাইতকে  বেষ্টন করিয়া একদলরণপরিচ্ছদধারী সৈনিক পুরুষ দাড়াইয়া রহিয়াছে।অল্পক্ষণ পরেই ডাকাইতগণের প্রাণবায়ু  ফাঁসী
কাষ্ঠের বিষম রজ্জু তাড়নে নিরোধ হইবে। কিন্তু
তাহাদের হৃদয় যেন আনন্দে নাচিতেছে। দস্যুদলের
নয়ন তেজোময়, বদন প্রসন্ন, ললাট চিন্তা রেখা শূন্য। তাহারা প্রহরী বেষ্টিত তৃণ শয্যায় বসিয়া উচ্চ
কন্ঠে সমর সংগীত গাইতেছে।
…………..               ……………………..   ………….
পাঠকের পরিচিত শশিশেখর, বীরসিংহ এবং চামেলী এই স্থলে আসিয়া লোক সমুদ্রে মিলিয়া
গিয়াছেন।
……………..        ………………….. ……….. ………

কেল্লার ঘড়িতে  ৬ টা বানিয়ে গেল। একজন
ইংরেজ রাজপুরুষ অশ্ব পৃষ্ঠে আরোহণ পূর্বক
বধ্যভূমে সমাগত হইলেন।
তাঁহাকে দেখিয়া সৈন্য গণ  অস্ত্র হেলাইয়া অভিবাদন করিল। তাঁহার ইঙ্গিত ক্রমে জল্লাদ
সর্বপ্রথম ডাকাইতগণের দলপতি  অচল
সিংহকে লইয়া ফাঁসীকাষ্ঠের উপর  আরোহন করিল।  অচল সিংহ যেন শেষ একবার ইহজগৎ
দেখিয়া যাইবার জন্য সেই দূরে প্রসারিত লোকাকীর্ণ প্রান্তরের উপর তেজময় নয়ন নিক্ষেপ করিলেন। তাঁহার তীব্র নয়ন জ্যোতি দূরে আপন
হৃদয় সর্বস্ব প্রিয় কন্যা চামেলির উপর পতিত
হইল। তিনি বধ্যমঞ্চে দাঁড়াইয়া বলিলেন “ভাই
জল্লাদ মুহুর্তকাল  অপেক্ষা কর,তোমার সাহেবকে জানাও, আমি একটিবার আমার প্রিয় কন্যার সহিত শেষ সাক্ষাৎ করিয়া সংসারের সমস্ত কার্য্য
সমাপ্ত করিয়া যাইবো। ভাই দেখো ঐ উচ্চভূমি
খন্ডে আমার কন্যা মলিন মুখে দাড়াইয়া রহিয়াছে। “
………………………………             …………………
তারপর বীরপুরুষের অনুরোধে ক্ষীণ প্রাণ জল্লাদ
রাজপুরুষকে  একথা জানালে রাজপুরুষ অচল
সিংহের সে প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। তখনই সেনাপতি
অচল সিংহ প্রিয় কন্যা চামেলীকে বলেছিলেন,
” চামেলী আমার ইচ্ছা যে তুমি বীর সিংহকে বিবাহ
করিয়া অতঃপর সংসার সুখে কাল যাপন করিবে।
নচেৎ তোমার ন্যায় অসহায়া বালিকার পক্ষে সংসার ক্ষেত্র মরুময় হইবে। ইহা বলিয়া অচল সিংহ চামেলীর অতি নিকটে অগ্রসর হইয়া,
পার্শ্বস্থিত প্রহরী গণের অজ্ঞাতে ধীরে ধীরে বলিলেন, গণগণির বনে আমাদের সেই দগ্ধ শিবির
ক্ষেত্রে  যথায়  আমার আবাস কক্ষ স্থাপিত  হইয়াছিল , সেই স্থলে কয়েকটি ফুল গাছের তলায়
খনন করিলে একটি সুড়ঙ্গ পথ পাইবে, তাহাতে ছয়টি লৌহ বাক্সে অনেক ধনরত্ন আছে তুমি  তাহা
গ্রহণ করিবে। তন্মধ্যে একটি বাক্সে কতকগুলি
কাগজপত্র আছে এবং একখানি কাগজে বীরসিংহের জীবন বৃত্তান্ত লেখা আছে। বীর সিংহ
সদ্বংশ জাত রাজপুরুষ যুবক। “

                                                           ক্রমশঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here