পর্ব-৩৪ঃপ্রাচীন বাংলা ও তার নদ-নদী: নিয়ে লিখছেন শ্রী দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী

0
77

 পর্ব-৩৪

প্রাচীন বাংলা ও তার নদ নদী

                                                                                            ছবিঃ গৌতম মাহাতো

                      নিয়ে লিখছেন শ্রী দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী

                                 ১০
আমদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ হ’ল এই সরস্বতী নদীর বহমান স্রোত এসে মিলেছিল বর্তমান তমলুকে এবং অন্যান্য দুটি মুখ্য নদী রূপনারায়ণ ও দামোদরের জলধারা এবং তৎসহ সাঁওতাল পরগনা থেকে সৃষ্ট  অনেক  ছোট নদী বা স্রোতের জল এই সরস্বতী নদীতে মিলত। 
 আঠারো শতাব্দীর আশেপাশে, তমলুক বন্দর তার গুরুত্ব হারালো কারণ এই সরস্বতী নদীর মুখে  পলি পড়ে যাওয়া নদীর স্থানান্তরিত হওয়া।  যার ফলে নদীর আরও উপরাংশে সপ্তগ্রাম বা সাতগাঁও তে বন্দর স্থানান্তরিত হয়। ১৪ শতাব্দীর (A.D.) সময় সমগ্র দক্ষিণ পশ্চিম বাংলার মুসলমান রাজত্ব ছিল এই স্থানে। আবার ১৬শতাব্দী তে
ভাগীরথীর মুখ্য স্রোত হুগলি নদী দিয়ে প্লাবিত
হ’ল। এই সাতগাঁও রাজধানীর ধ্বংস হ’ল। নদী প্রথমে হুগলি তারপরে কোলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। উপরের সরস্বতী নদী মৃত, অবলুপ্তি হয়েছিল। কিন্তু ভাগীরথী নদী অথবা হুগলি নদীটি পুরানো
আদি গঙ্গাতে মিলেছে, জলধারা একেবারে কমে যায় এবংএই স্রোত সাঁকরাইলের নিচে সরস্বতী নদীর শেষ অংশে প্রবাহিত হয়। 
পদ্মা নদীর গতিপথ ও বিগত চার শতাব্দীতে পরিবর্তন হয়েছিল। এই পদ্মা নদী থেকে সৃষ্ট
অনেক ধারার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। 
তবে ধারণা করা যেতে পারে প্রথমে এই নদী অতীতের রামপুর, বোয়ালিয়া তে বহমান হয়ে 
চালান বিল, ঢলেশ্বরী হয়ে অতীতের ঢাকার বুড়িগঙ্গা হয়ে মেঘনা মোহনাতে প্লাবিত হয়। 
১৮ শতাব্দীতে পদ্মার নিচু অংশ আরও দক্ষিণে
  বহমান হতে দেখা যায়।  এই নদীটি ফরিদপুর জেলা, বাকারগঞ্জ  হয়ে মেঘনা নদীতে মিলেছিল। 
এই স্থানটি হ’ল দক্ষিণ  শাহবাজপুরের দ্বীপের
কাছে এবং চাঁদপুরের দক্ষিণে প্রায় ২৫ মাইল আগে। রাজা রাজবল্লভের বিখ্যাত শহর রাজনগর স্থিত ছিল উত্তর পাড়ে এবং প্রায় এই শহরের পাশ দিয়ে কালীগঙ্গা বহমান ছিল এবংপদ্মায়  সংযুক্ত হয়ে মেঘনা নদীতে প্লাবিত হ’ত। 
১৯ শতাব্দীরA. D.,মধ্যভাগে পদ্মা নদীর জলধারা
এই  কীর্তিনাশা মহানালা (kirtinasa channel) দিয়ে প্রবাহিত হতো। 
ক্রমশ পদ্মা নদী এই বর্তমান অবস্থানে থাকলো। 

                             ১১

আমাদের বাংলার চারিদিকে নদী দিয়ে ঘেরা। সেই সব নদী গুলি এখন এর মত   মজে যায়নি বা ক্ষয় হয়নি, নদী গুলির গভীরতা ছিল বেশি। আজকের
নদীর অবক্ষয়ের জন্য আমরা দায়ী। অতীতে নদীর
গতিপথ বদলেছে নিজস্ব ঢংয়ে, প্রকৃতির খেয়ালে। 

এই পদ্মা নদীর নিচু অংশ যুক্ত হয়েছে ব্রম্ভপুত্র নদ
ও মেঘনা নদীর সঙ্গে এবং এই সংযুক্তি ফলে মেঘনা মোহনা তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে এই ব্রম্ভপুত্র নদের প্রধান জলরাশি ক্রমশ: নিম্নগতিতে
যমুনা নদীতে প্লাবিত হয়ে গোয়ালন্দর কাছে পদ্মার নদীতে মিলেছে।  কিন্তু ব্রম্ভপুত্র নদের পুরানো ধারা ছিল একেবারে অন্যরকম :
এই নদটি গারো পাহাড়গুলিকে  (garo hills) 
ছুঁয়ে গেছে পশ্চিমে তার পরে দেওয়ানগঞ্জের পূর্ব-দক্ষিণে প্রবহমান হয়েছিল জামালপুর (যেখানে ঝিনাইদহ শাখা), ময়মনসিংহ, পাশের  ময়মনসিংহ জেলার মধুপুর জঙ্গল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঢাকা জেলার পূর্ব অংশে বয়ে গেছে আর তারপরেই লখমিয়া ( Lakhmiya) তে একটি শাখা নদী তৈরি করে নাঙ্গলবাঁধ হয়ে প্লাবিত হয়েছিল
দক্ষিণ- পশ্চিমে সোনারগাঁও হয়ে ঢলেশ্বরী নদীতে
পতিত হয়েছিল। এই লখমিয়া নদী  মুখ্য ধারার প্রায় সমান্তরাল ভাবে বয়ে গেছল, এবং বহমান
হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের কাছে ঢলেশ্বরী নদীতে,  এরই পশ্চিম প্রান্তে ব্রম্ভপুত্র নদের মুখ্য জলধারার সঙ্গে। ১৮ শতাব্দীতে এই ব্রম্ভপুত্র নদের ধারা শুকনো হয়ে গেছল এবং বয়ে গেছল আরো পূর্ব দিকে  ময়মনসিংহ জেলার ভৈরব-বাজারের মেঘনা নদীতে। 

Ref: The History of Bengal(old course of the Brahmaputra), Professor Dr. R. C. 
Majumdar., 1943.

                                                       ক্রমশঃ….

                         

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here