স্বপ্নধারার পর্বকথা(১ম পর্ব)

42
173
শুক্তি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করে এখন নিভৃতেই তাঁর লেখা-লিখি নিয়েই ব্যস্ত। ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন সাহিত্য পত্র পত্রিকার সাথে। লিখেছেন বাস্তবের আলোকে দেশ-বিদেশের পুরাণের বিভিন্ন কাহিনী ও বেশ কিছু কবিতাও। এছাড়াও শুক্তি যুক্ত “জিজীবিষা” নামক লিটল ম্যাগাজিনের সাথে। সেখানেও তাঁর নিয়মিত লেখালেখি। নাচ তাঁর ভীষণ প্রিয় এছাড়াও শুক্তির ছবি আঁকা ও ফটোগ্রাফি নিয়ে অগাধ আগ্রহ।আজ থেকে প্রতি সপ্তাহে বাইফোকালিজম্-র পাতায় থাকছে তাঁর এই ধারাবাহিক।

স্বপ্নধারার পর্বকথা(১ম পর্ব)

কলমেঃ শু ক্তি   চ ট্টো পা ধ্যা য় 

ছবিঃ সু নি পা   ব্যা না র্জি

 

পৃথিবীতে স্বপ্ন দেখে না এরকম কেউ আছে কি? নাহ, তা বোধহয় নেই। আমরা সকলেই প্রতিদিন অল্প-বিস্তর স্বপ্ন দেখে থাকি। আচ্ছা, আপনাদের সাথে এরকম হয়েছে, যে হঠাৎ মাঝরাতে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেছে? বা হয়তো সকালে উঠে নিজের রাতের দেখা স্বপ্নেই নিজের ভীষণ হাসি পেয়েছে। স্বপ্নের কথা বললে বা শুনলেই আপনাদের মনে প্রথমেই কি আসে? কিছু কল্পনা? অবিশ্বাস্য কিছু ঘটনা? নাকি অদ্ভুত কিছু হাস্যকর মুহূর্তের ছবি? স্বপ্ন অনেক সময় তা রঙিন, আবার অনেকসময় সাদা-কালো। সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর আমরা মাঝে মাঝে সেগুলি নিয়ে যখন ভাবি তখন কিছু সময়ে বেশ মন খারাপ হয়ে যায়। আবার কখনো আমরা অবাক হয়ে যাই এই ভেবে যে, “এও সম্ভব? এরকম কি করে হতে পারে?’’ জানেন তো, বিজ্ঞানীদের ও মনোবিদদের মতে, আমরা নাকি ঘুমের মধ্যে একদিনে ৫-৭ তা স্বপ্ন দেখতে পারি। কি আশ্চর্য ব্যাপার না? প্রতিদিনই মানুষ স্বপ্ন দেখে, কিন্তু তার যে এত ধরন আছে তা কি আমরা কখনো ভেবেছি?মনোস্তত্ববিদ Sigmund Freud বলেছিলেন, “Dreams are often most profound when seem the most crazy.”
আজ এইরকমই একটা বিষয়ে আপনাদের সাথে একটু আলোচনা করতে চলে এলাম বাইফোকালিসমের পাতায়। হ্যাঁ, এতক্ষনে নিশ্চয়ই বুঝেই গেছেন বন্ধুরা, আজ আমরা “স্বপ্ন” নিয়ে আলোচনা করব। বেশিরভাগ মানুষই স্বপ্ন দেখে। অনেকক্ষেত্রেই তা অদ্ভুত,হাস্যকর, কিছু সময় তা ভয়ঙ্কর, বা কিছুক্ষেত্রে বেশ উদ্বেগজনক বা সময়ে সময়ে তা দুঃখজনকও। আসুন, আমরা একটু দেখে নিই “স্বপ্ন” কি? মনোবিজ্ঞানের ভাষায় স্বপ্ন হল একধরনের মানসিক স্থিতি যে অবস্থায় মানুষ ঘুমের মধ্যে বিভিন্ন ছবি দেখতে পায়, চিন্তা করতে পারে, অথবা ভিন্ন ভিন্ন ধারনা পোষণ করে। স্বপ্ন দেখার সাথে সাথে মানুষের এক ধরনের অনুভুতি হয়। কিছু সময় আমরা স্বপ্নগুলো মনে রাখতে পারি, আবার কিছু সময়ে ভুলে যাই। দেখেছেন কাণ্ড, এত কথা বললাম, কিন্তু এটাই বলা হল না যে,স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা যারা করেন তাঁদের কি বলে? তাঁদের বলা হয় Oneirologist, আর স্বপ্ন নিয়ে যে শাখায় গবেষণা করা হয় তাকে Oneirology (ওনিয়রলজি) বলা হয়।


এইসব পড়ে- শুনে নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন আসছে যে, স্বপ্ন কেন আসে? আসুন এবার দেখে নি এসম্পর্কে মনোবিদ ও বিজ্ঞানীরা কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মনোবিদ ও বিজ্ঞানীরা এর কোনো নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না দিলেও তাঁদের মতে, স্বপ্ন বৈজ্ঞানিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ের উপর গবেষণা করে ও বিভিন্ন স্বপ্নের প্রকৃতি নির্ধারণ করে। স্বপ্ন শুধুমাত্র ঘুমের মধ্যে চলা কিছু ছবি বা ঘটনা নয়, বিজ্ঞানীদের মতে তার মধ্যে কিছু তথ্যও অন্তর্নিহিত আছে। স্বপ্ন দেখার সময় চোখের একধরনের সঞ্চরণ হয়, যা রapid-eye-movement নামে পরিচিত। স্বপ্নের স্থায়িত্ব নির্দিষ্ট সময়ের উপর নির্ভর করে না। সেটি কিছুক্ষন(কয়েক সেকেন্ড) স্থায়ী হতে পারে, আবার বহুক্ষন(২০-৩০ মিনিট বা ১ ঘণ্টা) স্থায়ী হতে পারে। এবার মনে একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন আসে স্বপ্ন কি? স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে হলে, মানসিক স্থিতি সম্পর্কে আমাদের কিছু ধারনা থাকা দরকার। মনোবিদদের মতে, আমাদের মনের বেশিরভাগটাই আমাদের অজানা। ঠিক যেমন হিমবাহ হয়ে থাকে। হিমবাহের যেমন শুধু চূড়াটুকু দেখা যায়, মনেরও শুধু চেতন অংশটুকুই আমাদের চেনা। বাকিটা রহস্য হয়ে ছায়ার মতো নিস্তব্ধে থাকে। আসলে আমাদের মন তিনভাগে বিভক্ত – চেতন(Concious mind),অবচেতন(Subconscious mind), ও অচেতন(Unconcious mind)। চেতন বা Concious mind সম্পর্কে আমরা সকলেই পরিচিত, কারণ যেসব ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ঘটে, যা আমরা দেখতে বা শুনতে পাই অথবা অনুভব করতে পারি, তা সবই আমাদের চেতন মস্তিষ্কের মাধ্যমেই ঘটে থাকে।
অবচেতন অর্থাৎ, Subconscious mind হল চেতনের মতই মনের আরও একটি দশা। মনোবিদদের মতে “Your conscious mind condemns and your subconscious mind obeys”. আমাদের অবচেতন মস্তিষ্ক হল কোন প্রশ্নের উর্দ্ধে। দিন-রাত্রি যা কাজ করে চলে আমাদের আচার-ব্যবহার সঠিক পথে চালনা করার জন্য।এটি একটি পদ্ধতি মেনে চলে, যা আমাদের আবেগ, আশা-আকাঙ্খা, চাহিদা সবকিছুই নিয়ন্ত্রন করে। অবচেতন মস্তিষ্ককে বলা হয় ‘‘Homeostatic impulse”. অনেকসময়ই মনে হয়, আমাদের(মনকে) কেউ যেন চালনা করছে, সেটি অবচেতনরেই দান। অবচেতন মস্তিষ্ক অনেক বেশি সক্রিয়, স্বাধীন এবং উদ্দেশ্যবাহিত।


অচেতন মস্তিষ্ক বা Unconcious mind সম্পর্কে আমাদের কোন ধারনাই থাকে না। হয়তো,আমরা আমাদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে এমন কিছু কাজ করি, যেটি সম্পর্কে আমাদের কোন ধারনাই ছিল না। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলতেই হয়, স্বপ্নের ক্ষেত্রেও এমন কিছু স্বপ্ন আমরা দেখি, যা আমাদের ধারনার অতীত। Sigmund Freud তার “The Interpretations of Dreams” গ্রন্থে, একটি পদ্ধতির সাহায্যে স্বপ্নকে বর্ণনা করেছেন। আধুনিক যুগে মনে করা হয়, ‘স্বপ্ন’ হল এই অচেতন মনের কল্পনাপ্রসূত মানসিক অবস্থা।
তবে বলাই বাহুল্য, স্বপ্ন কথাটির বিস্তার কিন্তু অনেক। শুধুমাত্র ঘুমের মধ্যে দেখা কিছু ছবি বা ঘটনাই কিন্তু স্বপ্ন নয়। স্বপ্ন হল আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের জীবনের লক্ষ্য। আমাদের প্রতিদিনের কাজ করার ইচ্ছেশক্তি। আমাদের জীবনের নতুন একটা দিন দেখার এবং সেটিকে ভাল করে কাটানোর রসদ।স্বপ্ন নিয়ে মানুষের কৌতূহল চিরকালীন। সেইজন্যেই, বহু প্রাচীনকাল থেকেই দেশে-বিদেশে সমগ্র বিশ্বের পুরাণ,পরবর্তী সাহিত্য, বিজ্ঞান বা মনোবিদ্যায় স্বপ্ন বা স্বপ্ন সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা স্থান পেয়েছে। তবে, আজ এখানেই ইতি টানলাম। পরের পর্বগুলিতে এইরকমই স্বপ্ন সংক্রান্ত আরও গল্প নিয়ে আসব আবার আপনাদের সাথে কিছু মধুর সময় ভাগ করে নিতে।

লেখা পাঠাতে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here