অপর্ণা দেওঘরিয়া ‘-র কবিতাগুচ্ছ

0
116
                                                       

                                                          
                                                     

 অপর্ণা দেওঘরিয়া ‘-র কবিতাগুচ্ছ

                                                                               ছবিঃগৌতম মাহাতো

                    অর্ন্তযামী


জীবনের ছেঁড়াপাতার আকাঙ্খায় মুখ ঘুরে  যায়, 
অবিশ্রান্ত সুধায়, এই জন্মে হলোনা কিছুই, 
দিশাহারা অনুভবে, রঙে রঙে অভিমানে, হায় —
কত মন্দিরের চাতাল,  ঠাকুর দালানে ঘোরে মন। 

পথের অজস্র বাঁকে, বৃষ্টি খোঁজে মায়াময় মেঘ, 
যাপনের ছন্দ গুলি সম্প্রীতির জ্যামিতিক ছকে–
জ্যোর্তিময় আলোকের দেবতারা পুষ্প ছড়ায় ;
বড় ক্লান্ত পরাজিত অন্তরে ভরসা মায়ের … 

কোথাও সাইরেন সুর,  বাবা ওই আসবেন ফিরে, 
খুশিময় পাঠশালায় চোখে  আঁকা ধ্রুবতারা আজ 
স্লেটের উপরে হাত, বুলিয়ে বুলিয়ে কত শেখা,  
ভলোবাসার বর্ণমালা,  আনন্দের মুক্ত বাতাস…

পাখিরা অম্বরচারী,  বিষাদের স্রোতে ভাসে জীবন, 
রাঙাদি র ঝালমুড়ি,  যাবতীয় সুখের প্রশ্ন আঁকে  
তোমার চরণ তলে বসে যদি দগ্ধ হই আমি.. 
হতাশার অহং যায়,  আরশি তে হাসে অর্ন্তযামী।

                     ডাক


তোমার ঠিকানায় ভেসে যায় কৃষ্ণবর্ণ আঁখি
তেপান্তরের মাঠে সূর্যের স্নেহ সুখ মাখি। 

অনির্দিষ্ট ঠিকানায় সম্পর্কের সুচরিত মন,
সাজানো অশ্রুপাতে তোমাকেই ভেবেছি আপন। 

উত্থান পতনে দিন চলে যায়, অভিমানে, ছড়িয়ে 
জীবন ওঠেনা ভরে অফুরন্ত ঝরাপাতা কুড়িয়ে। 

নির্মল আকাশে যদি চিঠি আসে উড়ে একদিন,… 
গভীরে গোপনে তুমি সাজিয়েছে অফুরন্ত ঋণ। 

কত পাখি রঙ মাখে,  কত জল ছবি প্রাণ আঁকে 
কথায় গেঁথেছি মালা,  যে মালা হৃদয়ে তোমায় ডাকে।

                 খুশির পৃথিবী


শান্তি সুখে বিশ্বাস বোধে সুন্দর আলোময় 
হয়ে উঠুক আমাদের আরোগ্য নিকেতন।

মৌন মুগ্ধতায় ভরপুর হোক তিলত্তমা ভুবন 
আশ্বাসের কলতানে বাউলের মধুরতায় 
স্মৃতির সম্ভারে আত্মবিশ্বাসের মৌন মুগ্ধতায় 
মঙ্গলঘট পূর্ণ হোক ভৈরবধ্বনির আনন্দের বার্তায়,  

সমর্পিত গোলক ধাঁধায় অবলম্বিত জীবন জোয়ারে 
খুশির একতারা বাজুক স্রোতের ধারায় অনন্ত কাল ধরে। 

স্বপ্ন মালার যুদ্ধে মুছে যাক দুঃখের আকাশ 
ছন্দের বাগানে রক্তিম হোক খুশির বাতাস…

পাখিরা আজানের সোহাগে ভাসুক অষ্টপ্রহর 
উচ্ছ্বাসের জয়জয়ন্তি ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে নিরন্তর, 
শপথের রঙ্গিন হাত বাড়াক আত্মীয়তায় সুরে 
খুশির পৃথিবী হাসুক অনন্তকাল ধরে। 

                      কাঙাল


রাত্রি গভীর হলে অহঙ্কার সামনে এসে দাঁড়ায় 
জমে থাকা স্রোতে ও প্লাবনে যন্ত্রণার মেঘ, 
দানপত্রে নেচে ওঠে সুরক্ষিত আনন্দ, 
বহমান প্রতিশ্রুতির স্রোতস্বিনী নদী 
প্রতিক্ষায় ভাসে। 

গাছালির ফাঁকে,  ছায়াপথে,  স্বপ্নের সাক্ষীরা 
নতুন বর্ণমালায় ভরে তোলে তোমার শরীর 
অরণ্যের লাবণ্য জুড়ে জোনাকির খেলা সগৌরবে –
জীবনবোধের সুরে সংঘাতের বীজ বোনে 
দুর্বিপাকের কুড়ি…

সাবলীল ছন্দময় বিশ্বস্ত হৃদয় 
সম্মোহিত গগনে যজ্ঞটিকা আঁকে 
শান্তির অন্তরায় সেজে ওঠে বিজয় উল্লাস 
খুশির অন্তরে মায়াময় বিস্তারে 
   অস্পষ্ট কলতান,  কাঙলের মতন ডাকে।

                  মেঘের ডানা


ছুটতে ছুটতে স্কুল ভ্যান,  চলমান টোটো,
প্রটেস্টান্ট গীর্জার পাশে বই এর দোকান 
শিকারী পাখির মতন তীক্ষ্ণ দুটি চোখ 
সহজাত দৃষ্টির ভাষ্কর্যে হঠাৎ দুড়ুম করে শব্দ তোলে। 

আকাশ কে আমার বিশ্বাস নেই,  
উদ্ধত অমলিন দক্ষতায় কয়েক পশলা ভিজিয়ে দিল,  
জীবনের সম্পর্কিত ভাবনায় যোগ বা বিয়োগ
কিংবা রাগাশ্রয়ী প্রেমের নন্দনে 
যেন রূপকথার রূপ কুমার,  সহজিয়া সৌম সাগর, 
গাছের পাতায় খোঁজে কবিতার পাখি।  

আমি কী বলতে পারি?  
জনমানুষের ভীড়ে খুঁজে বেড়াব তৃণের আড়াল, 
অনন্ত শান্তির লোভে ঝরোঝরো মায়ার সানাই 
উন্মুক্তমেঘের ডানায় ভিজে উঠি
 মাধুর্যের সুখে।

                     ডাক(২)

একবার একান্ত ডাক চাইছি 
সূর্য বন্দনার শুদ্ধ মন্ত্র উচ্চারণে আত্মজ সুখে। 
গভীর গোপনে অবিশ্রান্ত ধারায় 
আকাঙ্ক্ষার স্বপ্নের মতন ভাদু টুসুর গানে।

সর্ম্পকের সন্ধানে শেকড়ের গল্প ছড়ায় 
হৃদয়ের পুষ্পরেণ,  হস্তবন্ধনের হাতছানি
হয়তো বা গভীর রক্ষা কবজের ন্যায়…

তবে ওই নীল শাড়ি,  ঢেউ দোলা চিরায়ত 
শোক তাপ দগ্ধ জ্বালায় 
চির ধরা দেয়ালের পাশে 
ধ্যান জ্ঞানে প্রান্তিক ক্লাসে 
ভূগোল পড়ানো দিদিমনির আজীবন সাথী হয়ে থাকি। 

চিরতরে এই মন পাখি হয়ে যায় 
যদি ওই ডাক আসে চিরন্তন অগ্নির আভায় 
শেকে নিতে পারি ভুলের আঙুল
অপরাধীর এই দুটি হাত।

                   বাঁধন


মোহময় কামনায় জেগে থাকে নীল বিস্ময় 
হৃদয়ের স্রোতধারা, ঝড় যেন হয়ে ওঠে সুর,
ক্লান্ত পাখির পাখে হয়তো বা ভাসমান ভয়,
মধুলোভী মৌমাছি ছুঁয়ে থাকে বুকের সুদূর।


নির্ভেজাল অন্তরে চুম্বন এঁকেছে সোহাগ
নিজেকে সমর্পনে এ নিজেই বেঁচে উঠি ফের।
হয়তো দুঃখ কিছু, অভিমানে প্রেমের বেহাগ,
রেণু রেণু বিবেকের বৃষ্টি যেন বাঁধে আমাদের।

                                 ★★★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here