সুমিত্র দত্ত রায়-এর কবিতাগুচ্ছ

0
38
সুমিত্র দত্ত রায়-এর কবিতাগুচ্ছ

                                                
  

———–          ————-           ————

         হার মানা হার

মানুষ দুটো হলেই মনও অদ্ভুত,
ভাসার পাগলামিতে দুটি বুদ্বুদ।
গণ্ডি পার হয় না,ঠোকাঠুকি ক’রে,
তবুও বিচ্ছিন্নতা খোঁজে অনন্তের।
‘আমি’র সাক্ষাতে এজন্যেই দেখি,
চাওয়ার শেষও ফাঁকে বহু ফাঁকি।

পরিচয়ের পোক্ত গাঁথুনিও খুঁজি,
কখনো এতটুকুও ছাড়লেই বুঝি
 মিলের জগতে কত গল্পগাঁথা!
সত্যি নয়, বুননের নক্সীকাঁথা।
এটা ত্যাগ বললেও বেশ রাজি,
শুধরেও নিই দিনরাতের বাজি।

বাঁধনেতে অটুট স্মৃতিগুলো থাকে,
বারবার শুধু ধুলো দেয় দুই চোখে।
দৈবাৎ খুঁজে পেলে সবুজ নিশানা,
নিয়মমতো মানিয়ে চলার বাহানা।
ঠোক্কর খেয়েই এ জীবনটা গেলো,
বাঁধায় হার মানে সীমন্তের লালও…
              ————-

             রোদ্দুর চুরি

কবির যেমন বই ছিলো, কলম ছিলো,
তার সাথে ছিলো এক চিলতে বারান্দা।
পূবমুখো সে বারান্দায় রোদ্দুর খেলতো,
দিনের কাজের ফাঁকে ফাঁকে উঁকিঝুঁকি!
তবু রোদ্দুর চুরি গেল এক অমানিশায়।

এমন চুরি যে আগেও হয়নি, বলব না।
মাত্র কিছুদিন আগেই তো গ্রহণ গেলো,
কথায় বলে রাহুদশায় নাকি গ্রহণ লাগে,
দশা কাটে সময় মেপেই, আর তারপর!
আলো যেন ঠিকরে পড়ে সেই বারান্দায়।

নানা যুক্তি খাড়া যখন ছুটি চায় রোদ্দুর।
কখনো শীতকালীন কুয়াশার আধিক্যে!
কখ‌নোবা নিম্নচাপের জন্যে ঘন আঁধারে।
বাদুলে আবহাওয়ার দাপটেও রোদ চুরি!
মোটের ওপরে সবাই রোদ ফেরত দেয়।

এবারের ঘটনা বেশ কিছুটা আলাদাই।
এক চিলতে বারান্দা হতে রোদ্দুর চুরি!
ইজি চেয়ার, বই ,কলম সবাই  হাজির,
বিপর্যয়ের জন্যেই বন্ধ শুধু  সূর্যপ্রণাম,
রোদ্দুরের চুরি, নোবেলের মতই প্রায়।

আটতলা বাড়িটা বাসিন্দার অপেক্ষায়।
                   ————-

                কালঘুম

জননীর কান্নাতেও ঘুম ভাঙে না।

লুণ্ঠন মানুষের আদিম বাসনা,
যৌবনে জননী যখন সম্পদ সাগরে,
লুটেরার দল বারবার দিয়ে হানা –
সম্পদ লুঠেছে , তাঁর অঙ্গ শূণ্য করে।
অসহায় সন্তানেরা আপ্রাণ লড়েছে
মান রক্ষায়। আঘাত ছিলো না মনে,
পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে তখনো দেখেছে  –
সন্তানের উদ্দীপনা আত্মবলিদানে।

পরাধীন জীবন যখন হলো শুরু,
তখনো মনে জাগেনি নামমাত্র ব্যথা।
বুঝেছিল সন্তানেরা নয় তাঁর ভীরু
সংগ্রামে মেতেছে ভুলে জীবনের কথা।
দীর্ঘকাল যারা তাঁকে বন্দীত্বে রেখেছে
আন্দোলনে শক্তিহেনে সন্ত্রাস ছড়ালো,
সন্তান ছিলো না তারা, এ স্বান্তনা ছিলো।

আজ বাঁধা মানে না তো নয়নের জল,
জননীর বুকে আজ শেল বিঁধে গেল।
সজ্জনের বেশে এসে সন্তানের দল
বিশ্বাস ভাণ্ডার তাঁর শূণ্য করে দিলো!
হীনকর্ম হানাহানি বৃথা রক্তক্ষয়,
করে তাঁর ব্যথাতুর হৃদয় চঞ্চল,
কি করে বলবে – এরা সন্তান নয়!
এই প্রথম হারালো মা, শেষ সম্বল।

তবু,
জননীর কান্নাতেও ঘুম ভাঙে না।
                   ————–

             প্রথম আলো

সবেমাত্র গুঞ্জন থেমেছে,
নিকষকালো বনমাঝারে,
আঁখি, দূরে যেতে চায় না,
একটানা বৃষ্টির রিমঝিম।

বিজুরি চমক কিছু এড়িয়ে,
বনপথ জনপথ ভেবে যাই,
প্রতীক্ষিত সব রাতগুলোই,
কাটে বিরামবিহীন আঁধারে।

অবগুন্ঠনে ঢাকা চঞ্চলতা,
গর্জন আশঙ্কা মুক্তাকাশে,
জনপথ বিলুপ্ত মনোপথে,
সৃষ্টি উল্লাসে ব্যপ্ত চারিধার
                 ————–

             বুদ্ধু ভুতুমের গপ্পো


বলতে কি পারো?
এক‌টি বটগাছ শিকড় সমেত,
কতটা বেগে ঝড় হলে?
তবেই না উল্টে যেতে পারে!

কিংবা এক‌টি খোলস সমেত
কর্দমাক্ত কচ্ছপ,
শ্বাসে কতটা ঘাটতি হলে?
তবেই না মরে যেতে পারে!!

মনে পড়ে যায়-
এক‌টি বিদ্রোহ, সেই একবারই,
উন্নত মস্তকেও, বিশাল একটা –
চক্রান্তের শিকার হয়েছিল!!!

তেমন ঝড়, কষ্টকর শ্বাসরোধ,
কিংবা কৌশলের জের,
কিন্তু আজ আর দেখি না।
জানি না হয়তো সত্যিই –
দেখতেও চাই না???

                            ★★★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here