মাসুদ বশীর-র গুচ্ছ কবিতা

0
165
লেখক পরিচিতিঃ  
মাসুদ বশীর। 
জন্ম স্হানঃ গোমস্তা পাড়া, রংপুর, বাংলাদেশ।
জন্ম সেপ্টেম্বর ০৪, ১৯৬৭ সাল। কবি, গল্পকার, লেখক ও উন্নয়ন কর্মী। 
লেখালেখির শুরুঃ ১৯৮০ সাল থেকে।
প্রথম প্রকাশিত লেখাঃ কবিতা(প্রতিদান), ১৯৮৪ সাল।
প্রকাশিত বইঃ প্রতীক্ষায় প্রতিদিন(কবিতা), ১৯৯০ সাল।
পুরস্কারঃ দেশব্যাপী (বাংলাদেশ) অভিযাত্রিক সাহিত্য প্রতিযোগিতায়(১৯৯১ সাল) কবিতা বিষয়ে ১ম স্হান অর্জন।
সম্পাদনাঃ সম্পাদক,  ভাঙ্গন(লিটল ম্যাগাজিন)।
নিজের প্রিয় উক্তিঃ “মনের চেয়ে বড় গতি কিছু নেই, সুন্দর মনের চেয়ে সুন্দর কিছু নেই”
শখঃ খোলা সবুজ প্রান্তরে একাকী বসে থাকা।

 

মা সু দ ব শী র-এর সাতটি কবিতা

শিল্প 

আমার কবিতাগুলো ছবির কাছে ছুটে যায় 
ছবিগুলো রঙের কাছে ছুটে যায় 
রঙগুলো আকাশের কাছে ছুটে যায়, 
আকাশ তখন মেঘের সাথে কথা বলতে থাকে।  
মেঘগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমাকে পাহাড়ের কাছে, 

পাহাড়গুলো পৃথিবীর খিলান হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়।
পৃথিবী তার গতির নিরিখে মেপে চলে সূর্যের পথ
সে পথের ধূলোয় ভেসে ওঠে আবারও রঙের খেলা!
খেলায় খেলায় প্রহর ফুরিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে,
আধো আলোয় ঝাপসা হয়ে যায় জীবনের ছবি….

শিল্পীর তুলিতে এভাবেই মেঘের তর্জন গর্জনে কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে আমার আকাশ!

আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামে তোমার দুচোখের পাতায়, তখন তুমি শ্রাবণ ধারায় আমাকে ভিজিয়ে দাও এবং আগন্তুক বাতাস আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে মিশিয়ে দেয় রঙের কৌটায়! শিল্পীর তুলি আমাকে তুলে নিয়ে বসিয়ে দেয় তোমার ক্যানভাসে, আর তুমি তা দেখে দেখে হাসতেই থাকো হাসতেই থাকো! 

শিল্পের ক্রন্দনও বুঝি নিরেট শিল্পই বুঝে!(?) 

তাইতো হৃদয় রক্তক্ষরণে গুমোট ব্যথায় চোখের জলেই একটা নিভাঁজ ছবি হয়ে যায়, ছবি হয়ে যায় এবং ছবি হয়ে যায়….

নিজালোকে নীল 

একটা হিসেব ছিলো, 
কোথায় যে হারিয়ে গেলো?
গণনার ভেতরে আঙ্গুল খসে যায়, পড়লো! 
যেতে দিলাম-
সে যায়; যাক না,
কেন ভাবি আপনা….!(?)

ভুল সমীকরণ 

সবাই বড় হয়ে যায়- 
সন্ধ্যা-মালতী আলোয় যখন ফুল ঝরে, 
রাত আসবার পূর্বেই একটা গুমোট ধোঁয়া-ছোঁয়া
রাতের ছবি আঁকতে বসে…..
সবাই বড় হয়ে যায়- 
একবীজ মাটির আদল চিরে বেরিয়ে পরে,
ফল আসবার পূর্বেই ফোটে ফুল নিদারুন! 
ভ্রমরের পদতলে অন্তিম সঙ্গম–
অতঃপর সৃষ্টি, খেলা করে রসে রসে…..
সবাই বড় হয়ে যায়- 
যেমন বড় হতে হতে পৃথিবী ছোট হয়ে যায়,
এসে পড়ে পুরো হাতের মুঠোয়। 
এইহাত একদিন বড় হয়ে যায়- নাড়ে কলকব্জায়,
রাজনীতি জনসংযোগ অর্থনীতি পকেটে পুরোয়!
মোড়লপনার ইতিহাস লিখে রাখে কালের পাতায়, 

আহা… বেশ বেশ বেশ! 
ছোটরা বড় হতে হতেই কেটে যায় রেশ…..
আর বড়টা- রাত্রির নিশীথে লজ্জায় মুখ লুকোয়।
বড়ত্বের বড়াই মিলিয়ে যায়- 
একদম সেই অন্ধকারের অতল তলায়!

ভেজাচোখ

বর্ষা ডাকলো বলেই বৃষ্টি এলো
বৃষ্টি এলো বলেই ভাসিয়ে নিলো
ভাসিয়ে নিলো বলেই তোমায় পেলো
তোমায় পেলো বলেই বর্ষা এলো….

শাশ্বত 

আমার কাছে একটা ঘোড়ার ডিম আছে। 
প্রতিদিন তাতে আমি তা দেই আর ভাবি এই বুঝি দুর্দান্ত দুরন্ত ঘোড়ার জন্ম হলো…. 

এভাবেই দিন-মাস-বছর-যুগ পেরিয়ে যাচ্ছে; 
কিন্তু ডিমটা সেই ডিম-ই রয়ে গেল, 
যেমনটি ছিল ঠিক তেমনই আছে! 
তবুও, প্রতিদিন তাতে আমি স্বযত্নে তা দিয়েই যাচ্ছি….

সে আসবে বলে অপেক্ষায় প্রহর গুনছি নিরন্তর, 
এই এলো বলে__
আচ্ছা, কেউ কি আমাকে বলতে পারেন-
দুর্দান্ত দুরন্তপনায় সুন্দরের পিঠে সওয়ার হয়ে ছুটতে চাওয়ার চেয়ে কি একথালা জীবনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ?(!)

অতঃপর,

জীবনের মায়া; কায়ায় মিলেমিশে শেষমেশ মাটিতেই ঘুমিয়ে পড়লো….

মরুঝড় 

কথার জন্যে কলম চলেনা
কলমের জন্যে গান চলেনা
গানের জন্যে প্রাণ চলেনা 
প্রাণের জন্যে ভালোবাসা চলেনা
ভালোবাসার জন্যে হৃদয় চলেনা
হৃদয়ের জন্যে আফসোস চলেনা 
আফসোসের জন্যে কান্না চলেনা
কান্নার জন্যে হাসি চলেনা
হাসির জন্যে দৃষ্টি চলেনা 
দৃষ্টির জন্যে চোখ চলেনা .

আহা….রে! চোখে বালি পড়ে গেল যে….
সেকি, বালি? চোখের বালি!(?)

Poem and poetry

অংক

কেউ যদি আমায় সত্যিকারের একটু ছুঁয়ে দিতো
তবে, হৃদয় সুদ্ধ জ্বরের ভীষণ উপশম হতো।
কেউ যদি আমায় একটু ভালো করে বকা দিতো
তবে, ভুলের নামতাগুলো একদম পেয়ে যেতো 
সঠিক নির্ণয়। 

ইদানীং সবকিছুতেই বড্ডবেশি বাড়াবাড়ি চলছে…
বয়সের খাতায় চোখ মেলে হিসেবের হিসেবে দেখি-
বয়সটা কেন যেন বয়সে নেই, ক্যালকুলেটরে জ্বরাতুরা! 

একহিসেব অংক যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ-
মাঝে, আমারটা যে কোথায় হারিয়ে গেলো কে জানে?

আমার মনে হয় আমার মনে হওয়াটাই যারপর নাই- 
একদমই সঠিক নয়…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here