মঞ্জীর বাগ-এর কবিতাগুচ্ছ

0
89
জন্ম 30মে মেদিনীপুর শহর।লেখাজোখার সাথে পরিচয়ের লম্বা পথ পেরিয়ে এসেছেন কবি।মূলত কবিতাই তাঁর বিচরণভূম কিন্তু গদ্যও লেখেন মাঝে মধ্যে।দুইবাংলা জুড়ে নানান লিটল ম্যাগাজিন তাঁর কবিতার প্রকাশ ক্ষেত্র।
প্রকাশিত বই অন্তর্জাত গান।ঘূর্নিজলের স্বাক্ষর, রং দহন, নষ্ট শ্লোক প্রভৃতি।আজকের বাইফোকালিজম-এর কবি মঞ্জীর বাগ।

মায়ের শাড়ি

কতদিন খোলা হয় নি আলমারিটা
মা চলে যাওয়ার পর আমি ওর নক্সার ওপর হাত বোলাই
স্মৃতি আমার চোখ ঝাপসা করে দেয়
চলে যাওয়া আমি সইতে পারি না যে

আমার চড়ুই সই ছড়ানো মুড়ির প্রাতরাশ সারতে আমার জানালায় প্রতিদিন , তাকে দেখিনা আর
সেই কালো কুকুরটা যার কপালে সাদা তিলকের মতো দাগ, যার জন্যে আমি বিকেলের বেঁচে যাওয়া ভাত নিয়ে অপেক্ষায়
তার জন্যে আমার অপেক্ষা শেষ হয়না এখন
আমাকে বহুদিন আগে এক গ্রীষ্মের বিকেলে
ভালো বাসা ফেলে চলে গেছে
আমি তার অংশ নিয়ে বাঁচি
কতদিন, মনে নেই খোলা হয়নি স্মৃতি আলমারি
ডালা খুলতেই মা ঘ্রাণ
একটা নতুন শাড়ি,মার পরা হয়নি কখনও
গায়ে ফেলতেই আঁচলের নক্সা থেকে মা চুমা খেল

চলে যাওয়া স্মৃতিরা এসো
তোমাদের জন্য ভাত বেড়েছি
এক এক গ্রাস রেখেছি
কারোর চলে যাওয়া সইতে পারি না যে


আত্মহত্যার প্রতি

ভাঙা চোরা সম্পর্ক স্তুুপে বসে ভেবেছি,অতঃপর
ভেবেছি তোমার কাছে যাওয়া যায় নাকি আত্মহত্যা
তখন নড়েচড়ে ওঠে গর্ভের সন্তান

এখন জীবন ভালোবাসি
এখন আমি পৃথিবী
প্রাণ ভালোবাসতে জীবন ভালো বাসতে,
জীবন এখন নদী

আমি হাত বাড়িয়েছি, ছুঁয়ে যায় পাখিগান
ছোট পতঙ্গের পাখা,সবুজ গাছের ফিসফিস কথা

মৃত্যুর শীতলতার থেকে আকর্ষক

আমাকে এখন যারা ডাকো,
ছুঁয়ে থাকো আঙ্গুলের রেখা,
তাদের প্রত্যেকে অসংখ্য ধন্যবাদ
তোমাদের জন্য, কেবল মাত্র তোমাদের জন্য
আত্মহত্যা ডিটেলিং এ ঠিকানা বুঝিয়ে গেলেও
আমি তার বাড়ির দরজা খুঁজে পাই নি


আয়না


বহু কিছু আমরা দেখি যা আমরা দেখতে চাই না
প্রতিদিন ঠোঁট পালিশের চিকন আড়ালে
আমার মতো কেউ হাঁটে
বয়সরোধক ক্রীম তাড়াতাড়ি হাঁটো
দেখছো না সময় এগিয়ে আসছে


দুদিন আগে মার মৃত্যুদিন ছিল।
মাকে মনেকরে

জন্মঋণ


আয়নায় দাঁড়ালে যাকে দেখি তাকে দেখতে মার মতন।
পিসির বাড়ীতে ঢুকতেই মিঠুদা বলল,তুই মামীমার মতন একদম,
ছোটপিসি বলে তোকে দেখলে বড় বৌদি মনে পড়ে।
মনে তো আমারও পড়ে,ঠিক যে বয়সটা থেকে মাকে আমি চিনি,আয়নায় যাকে দেখি সে মায়ের মতন।
তবুও অশান্ত রাতে ঘুম আসেনা যখন মার আঁচলের শান্তির গন্ধ খুঁজি,বড় শান্তঘ্রাণ,
আমি কি আঁচলে বাঁধতে পেরেছি শান্তির আলপনা?
মেয়েরা কি অশান্তির দিনে আমার আঁচল খোঁজে?
শান্তির গানে অন্তরা টুকু শেখার আগেই,
তুমি তারার দেশে চলে গেলে? দেখতে পাই,
নিবন্ত আমায় ঘুমিয়ে আছে আমার দুই মা
বড় ঝড়ঝঞ্ঝা বাইরে ঘুম আসছে না
গন্ধটা ডেকে দিচ্ছে আমায়
ধীরেধীরে আমি যেন তুমি হয়ে উঠছি

স্তব্ধ কথা


শেষরাতে যখন চাঁদ জেগে থাকে।তখন নিস্তব্ধতাও নিজস্ব ভাষায় কথা বলে।সে ভাষায় অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে বহু কথকতা হয়।যেকথা দিনে হয় না রাতে হয় না এই শেষ রাতের নিস্তব্ধতায় হয়।এসময় আমি নিজেকে নিবেদন করি নিস্তব্ধ শব্দের কাছে।শব্দের স্পর্শ ছাড়া বাঁচে না হৃদয়।প্রতিদিনের পাখি বলে বেঁচে আছ বেঁচে আছি।
এমুহুর্তে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি।পাশাপাশি বসেছি যখন কিংবা একান্তে দূরত্ব ঘুছিয়েছি সেই মুহূর্তে ও তো আমরা মুখোশ পরে।প্রিয় মানুষের মুখ দেখেছে কে কত আগে? আয়নার মানুষটি কেবল অবয়ব।
ধন্যবাদ। ভয়াবহ দিনে মুখোশ পরতে বলে তুমি মুখোশধারী প্রিয় মুখোশ চিনিয়েছো
আমায় ঘনঘন হাত ধুতে হবে। শতাব্দীধরে লাল কালো ধূসর বহু রঙ মেখেছি।আর না , জল সাবান এসো হাত ধুই


ঝাউ পাতা


ডেকো না ঝাউপাতা, মেঘ।
জল থেমে যায়, জলেরমধ্যে আঁকা যে জীবন
থেমে গেলে স্বপ্ন ছড়িয়ে যায়।
সে মায়ারাতে তোমার ভিতর চন্দ্র পুরুষ।
আমার শাড়ি র আঁচল জুড়ে এক ঈশ্বরী
পুনর্জন্মের কথকতা লিখে
বিশুদ্ধ আগুনের গান চাঁদ হয়ে মিলে গেল

আমি যদি ডাক দিই নদের বুকে সমুদ্র জাগে
তুমল তরঙ্গে ওলোট পালোট ছবি
ফিসফাস ফিসফাস
আমার বিনোদিনী সই হতেগিয়ে হৃদয়ের রক্ত খায় শোষক নালিকা,
রাজবাড়ির আয়নায় ঘুমিয়ে আছে আমাদের স্বপ্নেরা
একদিন মেঘের কাছে বৃষ্টি চেয়েছিলে
সে বৃষ্টিতে ভেজাভেজি হলো খুব
তুমল বজ্রপাত।ঘরেরপথ ভুলেছি আমি রাই

অমলিন স্বরে কিশোরী মেয়েটি ডাকে ঝাউপাতা
প্রিয় জল মেঘ বলে ডেকো না আর

রঙ

চাঁদ, দোলের চাঁদ. বড় ভয় করে তোমায়

তোমার পূর্ণ গোলক আলোর ছটায় এক
পাগল বের হয়ে আসে, ঢুকে পড়ে আমার ভেতর
দ্রাক্ষালতার মতো তার চুল;
ঢুকে পড়তে চায় পলাশের বনে;
আমি বৃন্দাবনের বৃন্দগান দেখি
আগুনের আঁচ পাই

পোড়া গন্ধে ভরা যমুনা তটে ও ভালো লাগে ভালবাসাবাসি গান,

রাধার পরণের বাস ছিঁড়ে গেছে,
এখনও গান অপেক্ষা করে,
সময়ের নদীজলে গানঘ্রাণ ভেসে গেলেও
পলাশ ,আজই হোলি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here