দিশারী মুখোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ

0
168
পরিচিতিঃ
আশির দশকে লিখতে আসা । লেখালেখি কবিতা শুধুই । অন্য কিছু উল্লেখযোগ্য নয় । প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ আটটি ।  শেষ বই ‘ চশমার অভাবে আমি’ ২০১৮ । কবিসভা পত্রিকার সম্পাদক ।

দি শা রী মু খো পা ধ্যা য়

ক্যানভাস অপেক্ষায় আছে 

প্রথমেই কালো , বাদামী বা ধূসর 
                           ব্যবহার না করাই ভালো 
ভালো মন্দ বলার আমি কে ? বলতে পারি 
তেমন ব্যবহার চাইছি না 

ক্যানভাস অপেক্ষায় আছে 
                                ব্যবহৃত হতে চাইছে 
কোনো একটা রঙ তাকে দিতে হবে 
একাধিক হলেও তার আপত্তি নেই 

একটা বেড়াল এইমাত্র 
এক ঘরের বিছানা ছেড়ে অন্য ঘরে গেল 
সে তো মাছ খেতে এবং খাওয়াতে ভালোবাসে 

পথশ্রমে ক্লান্ত চটিজোড়া 
                    পড়ে আছে দরজার বাইরে 
তাকে একটু ভালোবাসা দিলে , আশা করি 
কেউ আপত্তি করবে না 

ঘুটঘুটে আলোর মধ্যে 
রাস্তা আঁকতে বলেছেন স্যার 

চিঠির বাক্স 

খুলে খুলে খুঁজতাম বারবার 
                            পেতাম না কিছুই 

গ্রীষ্ম , বর্ষা একটু আধটু অবাধ্যতা করলেও 
                    আসা যাওয়া করে নিয়ম মতই 
ছায়ারা কখনো বড় হয় , কখনো ছোট 
                              কখনো কখনো অশরীরী 

কীভাবে হতাশার গাছ লাগাতে হয় 
                                   পরিচর্যা করতে হয় 
কোনো উঠে যাওয়া স্কুলে গিয়ে শিখিনি 
                       কিংবা ম্যাজিশিয়ানের কাছে 
শুধু প্রতিদিন খুলতাম , খুঁজতাম  এবং 
পরেরদিন কত তারিখ হবে 
                                     দেখে নিতাম 

সকাল হোক কিংবা সন্ধে , প্রতিদিন , প্রতিবার 
রুটের বাস ও স্টেশনের ট্রেন আসা যাওয়ার 
                                                     শব্দ পেতাম 

আজ হঠাৎ লক্ষ্য করি 
অপঠিত থেকে গেছে কত কত 
                      অভিমান , অভিযোগ , জল 

দেখতে না চাওয়া স্বপ্ন 

আগেরটা যথাযথভাবে শেষ হবার আগেই 
অন্য আর একটায় ঢুকে পড়তে হয় তাকে 
ফলত কোনোদিনই সে নিজেকে দেখতে পায় না আপাদমস্তক 

রেখাটি সরল মনে হাঁটছিল সামনের দিকে 
ভূমিক্ষয় , ধস এবং আগ্নেয়গিরি তার পথ রোধ করে 
তাকে বক্র করে তোলে 
একসময় ভাঙে 

ছায়াকে সঙ্গে নিয়ে নিভৃতে থাকতে চেয়েছিল অরণ্য 
লুণ্ঠন শব্দটি তাকে ধর্ষণের সঙ্গে পরিচয় করালো দিনেদিনে 
বাতাসেরও নিজস্ব কিছু বাদ্যযন্ত্র ছিল 
জায়গা ও সময় মত সে বাজাতো আপনমনে 
কিন্তু আপেলকে পোকা ধরলে কীরকম লাগে 
দেখতে সাধ হল শিল্পীর 

অসম্পূর্ণ নদীর ধারে 
পালক সরালে দেখা যায় জনপথের ধ্বংসাবশেষ 

ব্যাঞ্জন

একটাই সব্জি কী প্রয়োজনে কীভাবে কাটতে হয় 
আলাদা আলাদা নিয়ম আছে 
                        শিখেছিলাম মায়ের কাছে 
যেমন ধরুন আলু 

কাটছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে 
ছুরি ও চপারের সাহায্যে 
এখন তো হাঁটুমুড়ে বসতে পারিনা 
জানু আর নত হয় না 

খোসাগুলো আলাদা করে পাশে রাখতে হয় 
প্রথমে নগ্নতা 
তারপর হাড় , মাস , রক্ত , রস 
খাবার জন্যই তো এতো দাসত্ব , এতো ছ্যাঁঁচড়ামি 

কিছুই আজকাল আর পরিষ্কার করে বলা যায় না  
পরিষ্কার শব্দটি দিয়ে এখন আর শুধু পরিষ্কারকেই বোঝায় না 
যেমন বোঝায় না 
প্রোটিন মানেই খুব শক্তির আধার 

পিচের জন্য রাস্তা

কুকুরের মালিকটি আজ রাস্তায়
এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে দেখছে   আর
মৃদুমন্দ দুচার পা হেঁটেচলা-তাকে
                         গাছেরা দেখছে নীরবে

গাছেদের শরীরস্বাস্থ্য ইদানিং ভালো নেই
সংখ্যাতেও আজ তারা লঘু
                    – একথা প্রায় সকলেই জানে
না- জানাকে আজকাল কেউ
ছোটছেলে বলে ক্ষমা করে না
বিশ্বাসও এখন প্রায় সকলের কাছেই বিলুপ্তপ্রায়
তারচেয়েও বড় হলো
জানাজানিদের জামার রঙ এখন
                             অজানাদের ত্বকের মতই

কুকুরের মনিবটি বেশিদূর যেতে সাহস পায়না
কুকুরটিকে পাঠিয়ে দেয়
ও যখন ঘুরে আসবে, জানা যাবে
স্বর্গের বর্ত্তমান রাজার নাম

মূর্তি জানে

সে তার শিল্পীকে খুব বোঝে
নাকের ডগা, হাতের তালু, স্তনের তৃষ্ণা
    গড়ে ওঠে শিল্পীর মন ও মর্জি মাফিক
শাড়ির যতটা আড়ালেই থাক নাভি

লোহা দিয়েই তৈরি হয় ছেনি বাটালি
প্রয়োজন মত অল্পস্বল্প কাঠও ব্যবহার হয়
মানুষের অনেক আগে থেকে সে ইতিহাসকে পড়ছে
ইতিহাসের জন্যই, প্রকৃতপক্ষে, তার ঘুম
                                        প্রথম ভেঙে ছিল

ঘুমের কথা উঠলে, শত কষ্ট হলেও
তার রাগ পড়ে আসে , দেখেছে
ঘুম বলে শিল্পীরও কখনো ছিল না কিছুই

তালা

ঝুলছে বলে প্রমাণ করা যায়
বাড়িটা একসময় তৈরি শুরু হয়েছিল

সাদাবকের পাশে ঝিল তখনো জানত না –
চিন্তা করতে সে তখনো শেখেনি
ক্যাডবেরিও বাজারে আসেনি বলে
                      পরিবর্তন কতটা নির্মম হয়

কিছুদিন মাছের কালিয়া, ভাপা ইলিশ হয়েছিল
ঘরে পাতা দই তার গন্ধ দিয়ে
রান্নাঘর সাজাতো

লোকে সময়কে নিয়ন্তা বলে
কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক স্পষ্ট নয়
                      একটা সেগুন পাতার মত

এখন ও বাড়িতে আর চাও তৈরি হয় না

প্রতিশব্দে মধু

রাত্রে যে কামড়িয়েছে বুকে
নেংটিইঁদুরের বাচ্চার ধারালো তীক্ষ্ণ দাঁত নিয়ে
এখন উড়ে বেড়াচ্ছে
রামধনু কেটে তৈরি করা ডানা নিয়ে 
আনন্দকে তার আপন স্বাদ বুঝাতে বুঝাতে
আহ্লাদে মধু হয়ে উঠছে
ভোঁতা গণ্ডার, মাতাল হাতি, ক্ষুধার্ত বাঘ
পাথর পাথর আর যত রাজ্যের পাথর

কষ্ট হয়েছে তবু চেয়েছি
রক্ত ঝরেছে, নখ দিয়ে ছিঁড়েছি ক্ষত
পুড়ে পুড়ে পুড়ে আগুন হয়েছি

রাত্রে যে কামড়েছে, দিনেও কামড়াক আমাকে
মাংসের হাড়ের মত চোয়ালের কষদাঁতে ফেলে
মাথা থেকে পা , অবিরত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here