অ দি তি চ ক্র ব র্তী-র কবিতাগুচ্ছ

3
154
পরিচিতিঃ সম্পূর্ণ নাম অদিতি চক্রবর্তী। জন্ম ১৯৭২ সালে কলকাতার দক্ষিণেশ্বরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। কলেজ শিক্ষা সরোজিনী নাইডু ফর উওম্যান থেকে। তিনি একজন গৃহবধূ এবং সাহিত্যকলার পাশাপাশি বাগান চর্চা করে থাকেন। কবিতা লেখা শুরু কলেজের দেওয়াল পত্রিকায়। ১৯৯০ সালে ছাপা অক্ষরে নিজের লেখা প্রথম প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন ছোটো বড় পত্রিকায় কবিতা, অনুগল্প, রম্যরচনা, প্রবন্ধ নিয়মিতভাবে লিখেন তিনি। সংসার সামলে কলমের কথামালা চালান। চেতনার কিছু আলোকদ্বীপ নির্মাণই তাঁর যাত্রাপথের অভিলাষা। বর্তমান নিবাস পশ্চিমবঙ্গের পচিম বর্ধমান জেলার চিত্তরঞ্জন রেল শহর। আজ বাইফোকালিজম্-র পাতায় তাঁরই গুচ্ছকবিতার ডালি নিয়ে বসল সৃজনের হাট।

 

অ দি তি   চ ক্র ব র্তী-র কবিতাগুচ্ছ

 

কসম

সবসময় অঙ্কে ভুল করি
যতোবার হাতে ধরে যোগ শিখিয়েছো
ঠিক ততবার ভাগশেষ রেখেছি হাতে
এরপর বকা খেয়ে বিয়োগ হতে হতে
একক সংখ্যায়।
বলিহারি ধৈর্য্য তোমার!
ঠায় বসে রইলে চাতালের কোনে
আমি ঠিকমতো গাণিতিক না হওয়া পর্যন্ত
দশমিক ডানদিকে ক্রমাগত বসিয়ে বেহিসেবী আজ আমি জন মতে প্রখর গণিতজ্ঞ
অথচ আর্য পুরুষের কসম,
না বুঝেই হিসেবের খুঁটিনাটি
তোমার হাতে সযত্নে গুণক ধরিয়েছি শূন্য সংখ্যাটি।

 

ছিন্নমস্তা

চোদ্দআনা তোকেই দিয়ে দুই আনাতে আছি
ছিন্নমস্তা ডাকতে পারিস,মুণ্ডু ধরে নাচি
মাঝে মাঝে কল্পতরু দেখছি দু’চোখ বুজে
একটা বুলেট চিকন শরীর ঢুকছে সময় খুঁজে
ঠিকানা কই?কোথায় যাবে অবুঝ চোখের নদী?
জাল বুনছে মাকড়সাদল নজর ছিঁড়ি যদি!
বরং আকাশ অনেক সদয় বুক চিতিয়ে থাকে
একটি তারায় নরকগামী শ্লোক শুনিয়ে ডাকে
মাপতে জানি স্বীকৃত তাই বাড়িয়ে রাখা হাত
যুদ্ধ আছে সম্বলে আজ কৃষ্ণপক্ষ রাত
চোদ্দআনার ইজেল,তুলি, সুখ এঁকে দিক তোকে
দুই আনাতে খাঁড়ার পিঠটা করছি ঝকঝকে।

আগন্তুক

রঙের বাটি ঢালতে কেন চাও
বুকের পাঁজর ওতোই নরম ভাবো?
পোড়াচ্ছি মন আকাশছোঁয়া ঘরে
সন্ধ্যে হতেই বিস্মরণে যাবো।

তার মতো আর টগবগে মুখ নাই
যখন তখন দুরন্ত তেজ তুফান
গলনপ্রবণ দৃষ্টিটা ঝুমনীল
ইশারার ভুল মানে করে অভিমান।

শিখছি এখন রূপকবিতার শিষ
রাংতাকুঁচি বন্দীপাখা জ্বলুক
জন্ম,মৃত্যু ছুঁড়ে ফেলে নিশানাতে
রঙবাটিতে ডোবাই আগন্তুক।

 

অপরাজিতা

কার্নিশে নীল ফুলগাছ
পুরনো সিঁড়ির মতো ঘোরানো পেঁচানো।
মায়াবী একটা বাড়ি
রোদ্দুরে খেলা করে ছোটো ছোটো ফুলবড়ি নিয়ে
ভাব ভাব, আড়ি আড়ি।
কপাট গুনিনি কোনোদিন
ওখানেই ভালোবাসা থাকে
মায়াবী শরীরে বাঁচে স্পর্শ পেলেই
দু’হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকে।
রূপালী রাংতা মোড়া রংবাজ চাঁদ
মুঠো মুঠো সেঁকো বিষ ঢালে।
নীল লতা ভিজে যাবে মেঘের জলে
পাতায় পাতায়,ডালে ডালে।
ভারী অদ্ভূত ভাবে পড়শীনি লতা
আধোভেজা চুম্বন চায়
চলতি পথের বাঁকে পাতাগুলো নুয়ে এসে আদর জানায়।
অভিমানী অপরাজিতা, এতো কেন কুঁকড়ে রয়েছো?
পরাজিত তুমি নও,তুমি তো বিজিতা
শিশুবেলা যা যা ঘটে গেছে তার বিষ আজও বয়েছো?

 

মাঙ্গলিক

ওই বাড়িতে কাঁপা শ্বাস ফেলে সাদা সিঁথির দল
ওই বাড়ির নামটা মাঙ্গলিক
সঠিক সত্যি কেউ জানেনা পরখ চায়না বলে
ভেঙে গেলে আহত মনের ভিত
ও বাড়ির চৌকাঠে আটকায় শীত।
শোনা যায় ফিসফাসে ভাগ্যের গণ পরিহাস
দেখা হোক, ফিরে দেখা হোক–
তৃতীয় প্রহর শেষে ঘুমোবার ছলে এপাশ ওপাশ।
ওই বাড়ি মনখারাপের
শিকের গরাদ আর ঠনঠনে শুকনো উঠান
বাউরি বাতাস এসে এলো করে ঘোর লাগা দীর্ঘপ্রহর
আফসোস,শুধু আফসোস,বিবশ মথের মতো পড়ে থাকে ঘটমান।
যাকে আর্গল খুলে খুব কাছে টেনে নেওয়া ছিলো
ঈষৎ কোঁকড়া মোটা চুল ব্যাকব্রাশ
সময় অকালে তার আয়ুটুকু নিয়ে, একরাশ পরমায়ু সিঁথিতে রাঙালো।
মা, দিদা,ফুলিমাসি, রাঙাদিদি, মিতা
সাদা সাদা ফুলদল লিখছে কবিতা।
অথচ পাঁচিলের ওপাশের গল্পটি আলাদা রকম
বাগানের ঘাসগুলি মখমলি,ছোট করে ছাঁটা
হলদে ডানার প্রজাপতি বাণির্জ্য বাতাসে বেশ আঁটা।
এবাড়ির চিলেকোঠা ওবাড়ির কার্নিসে হাঁটে
যদি অতীত বৃষ্টিদিন ভিজিয়ে বিলীন করে গাঢ়তম ছাঁটে।

লেখা পাঠাতে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here