ই ন্দ্র নী ল   ব ক্সী-র ধারাবাহিক উপন্যাস– “চোরাবালি”(পর্ব-১০)

0
54
পরিচিতিঃ ইন্দ্রনীল বক্সী, “জন্ম – নকশাল পিরিয়ডে ..৭৩ এ দুর্গাপুরে , উচ্চতা মাঝারি, গায়ের রঙ মাজা, গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল টাইপ। লিখছি সেই কিশোরবেলা থেকে, দুর্গাপুর বেলা থেকে বর্তমান নিবাস – বর্ধমান। কি লিখছি ছাই নিজে তো জানিই না অন্যরাও জানে বলে মনে হয় না। হাবিজাবি করে চারটি বই প্রকাশিত।” বাইফোকালিজম্-এ তাঁর আজ ধারাবাহিক উপন্যাস ‘চোরাবালি‘-র দশম পর্ব

ই ন্দ্র নী ল   ব ক্সী-র ধারাবাহিক উপন্যাস

চোরাবালি(পর্ব-১০)

সকালে মুখ ধুতে না ধুতেই মোবাইলটা বেজে উঠল দেবুর। মাস্টার ফোন করেছে, একটু অবাকই হয়েছে দেবু। মাস্টারের নাম্বার থাকলেও এযাবৎ মাস্টার তাকে কখনও ফোন করেনি, দেবুও করেনি মাস্টারকে ফোন! সামান্য কিছু কথা হলো দুজনার, ওকে একবার অবশ্যই কলেজে যাওয়া বা আসার পথে দোকানে যেতে বলেছে মাস্টার কি একটা জরুরী দরকার রয়েছে। আর জানতে চাইল কাল বিগবাজারের সামনে মার্ডারের কথা শুনেছে নাকি, দেবু শুধু বলেছে সে শুনেছে, ও যে ওখানেই ছিলো, ওর চোখের সামনে লাশটা পড়েছে–একথা মাস্টারের কাছে চেপেই গেল। বাড়িতেও কেউ জানে না। বাড়িতে জানলেই একেবারে হুলুস্থুল শুরু করে দেবে মা।
সকাল থেকে মণিকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না, পড়তে গেছে বোধহয় ওর বন্ধু নুরদের বাড়ি। ওই দু একটা বন্ধু রয়েছে ওর, যেখানে মণি যায় সাধারনত বা ওকে যেতে দেয় মা। দাদা হিসেবে খুব একটা খবরদারি করতে পারেনা দেবু, তেমন দরকারও পরেনি। বাবা উঠনের এক কোন লুঙ্গি পরে উবু হয়ে বসে সাইকেলটাকে বেশ করে কেরোসিন তেল দিয়ে ঘসে ঘসে মুছছে।
“মাঝে মধ্যে সাইকেলটাকে একটু মোছামুছি করলেও তো পারিস! এটা তো এখন তোরই বাহন …” বলেই মাথা নাড়তে থাকে।
দেবু প্রমাদ গোনে, ঐ আবার শুরু হলো লেকচার, দু পুরুষের সাইকেল, খুব বেশি হলে শ পাঁচেক দিয়ে কেনা হবে ! তাই নিয়ে বাবার এতো আদিখ্যেতা অবাক করে দেবুকে। সাইকেল সাইকেল, প্যাডেল করব চলবে ব্যাস, তাই নিয়ে এত কথার কি আছে কে জানে।
“ওসব মোছামুছির সময় নেই” বলবো না বলবো না করেও বলে ফেলে দেবু।
বাবা এবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় ভ্রু কুঁচকে
“কেন ! কি এমন ব্যাস্ত তুই?… ব্যাবহারের জিনিস একটু যত্ন করার সময় পাস না !”
দেবু জানে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, এরপর কি কথা আসবে তাও জানে অভ্যাসে তাই উত্তর দেয় না।
“মা খেতে দাও বেরবো” বলেই বাথরুমে ঢুকে যায়, বাইরে যে বাবা আপন মনেই গজ গজ করে চলেছে কানে আসতে থাকে।

গতকালের বিগবাজারের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনার খবর আগুনের মতো বাতাস পেয়েছে গত কয়েকঘন্টায় আপাত শান্ত এই শহরের অলিতে গলিতে, এমনকি শহর থেকে বেশ দূরে দেবুদের গ্রামেও তার উত্তাপ এসে পৌঁছেচে। দেবু সেটা টের পেল বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যেতেই। বাড়িতে একটা আপত্তি তুলেছিল মা, টিভিতে নাকি দেখাচ্ছে বর্ধমানে নৃশংস খুনের ঘটনা, আজ মিছিল টিছিলও হতে পারে! দেবুর আজ না যাওয়াই ভালো, দেবু অনেক কষ্টে বুঝিয়েছে মাকে, কত লোকের কত কাজ রয়েছে, তারা কি একটা ঘটনার জন্য কাজ ছেড়ে বাড়িতে বসে রয়েছে! মা না মানলেও শেষ পর্যন্ত ওর জেদের কাছে চুপ করে যায় । ছেলেকে চেনেন দেবুর মা, ছোট থেকেই একরোখা ধরনের, যা মনে করবে করবেই!
মোড়ের মাথায় একটা জটলা লক্ষ্য করে দেবু। সকালে বাজারে আসা, বাস ধরতে আসা নিত্যযাত্রীদের বেশ কিছু চেনামুখ। দেবু ধীরে ভিড়ের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়, ছেঁড়া আলোচনা কানে আসতে থাকে…
“কি হাল হলো শহরটার… দিনে দুপুরে মার্ডার! …ভাবা যায়!”
“পার্টিগত কেস বলছে, এসব তো দামোদরের এদিকেই হচ্ছিল,শহরে এসব তো বন্ধই ছিলো… তাহলে…!”
“ধুর… অন্য কেস আছে… এখন মার্ডার হলেই পার্টি কেস করে দিচ্ছে …”
দেবুর কানে আসতে থাকে কথাগুলো, অকারণে ও কেমন শক্ত হয়ে যায়, যেন ওকেই সবাই দেখছে , এখুনি জিজ্ঞেস করবে কালকের প্রসঙ্গে! …কিন্তু ওরা জানবে কি করে ও ওখানে ছিলো! ওর সামনেই ঘটনাটা ঘটেছে! নিজের মনে কথা বলতে বলতে আরামবাগ রোড ধরে দেবু। দ্রুত সাইকেল ছোটায়, ব্রীজের কাছাকাছি এসে একটু শ্লথ হয় ,বেশ হাঁফ ধরে গেছে। ঝন্টুর চায়ের দোকানে দাঁড়ায় , এসময় ও সাধারনত চা খায় না, আজ মনে হলো একটা চা খুব জরুরী, সঙ্গে একটা সিগারেট। উত্তেজনাটা কিছুতেই বাগ মানছেনা! কানে বেজে বেজে উঠছে গুলি চলার ‘ফ্যাট’ ‘ফ্যাট’ আওয়াজটা! গুলির এরকম আওয়াজ হয় জানতোই না দেবু। চায়ে চুমুক দিয়ে ভাবতে থাকে মাস্টার আবার হঠাৎ তলব দিল কেন কে জানে! কি এমন ইমারজেন্সি হল। ভাবতে থাকে এখনই যাওয়ার পথে যাবে নাকি ফেরার পথে একবার ঢুঁ মারবে। কে জানে আবার মালের প্রোগ্রাম কিনা!
মাস্টারের দোকান পেরিয়ে যায় দেবু চুপচাপ, নাঃ এখন যাবে না। গেলেই হ্যাজাতে হবে, ওর এখন একদম ভালো লাগছে না। ওদিকে নাজমার খবর নেওয়া দরকার, নন্দিতারও, যদিও নন্দিতা কাল আশ্চর্য করেছে ওকে! ও যে এত শক্ত প্রকৃতির মেয়ে জানত না দেবু। একটু ঠোঁট কাটা, ডাকাবুকো টাইপ কিন্তু কাল নন্দিতা ওকে অবাক করেছে। নাজমাটাতো বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, এখন কেমন আছে কে জানে! কলেজের গেটে ঢুকতে ঢুকতে দেবু ঠিক করে কালকের ওদের যে কজন ছিল তাদের নিজেদের মধ্যে একটা আলোচনা জরুরী। বিষয়টা চেপে যেতে হবে নিজেদের মধ্যে। এক অর্কটাকে নিয়ে চিন্তা! ওই না বলে বসে সবাইকে জমাতে গিয়ে! বড্ড ভাট বকা ছেলে ওটা। সাইকেল রেখে ক্লাসে ঢুকে জানতে পারে অর্ক এবং নাজমা আসেইনি, নাজমা নাকি বেশ অসুস্থ, বেশ কবার বমি করেছে, আর একদম চুপ মেরে রয়েছে। নন্দিতাও কাল ঘুমোতে পারেনি সারারাত। বিশ্বজিৎ মোটামুটি ঠিক আছে, ওরা ঠিক করে এ নিয়ে কাউকে কিছুই বলবে না। অর্ক আর নাজমাকেও ফোন করে বলে দেবে যাতে এ নিয়ে আলোচনা না করে, যদিও কাল এ নিয়ে ফেরার সময়েই বিশ্বজিৎই সবাইকে বলেছিলো একথা কিন্তু কাল কার কানে ঢুকেছে না ঢূকেছে তার নিশ্চয়তা নেই।
দেবু, নন্দিতা, বিশ্বজিৎ একসঙ্গে বেরিয়ে এল কলেজের ক্যাম্পাস থেকে। তিনজনেই চুপচাপ হাঁটছে পাশাপাশি। নন্দিতা আজ সাইকেলে আসেনি কলেজ মোড় থেকে একটা টোটো ধরে নেবে। গতকালের ঘটনার অভিঘাতের রেশ ওদের তিনজনেরই মনের মধ্যে বেশ জোরালো ভাবে রয়ে গেছে এখনও, এরকম ওরা শুনেছে, পড়েছে খবরের কাগজে কিন্তু চাক্ষুস এরকম ঘটনার সাক্ষী হওয়া এক অন্য অভিজ্ঞতা। কলেজ মোড়ে এসে নন্দিতা দাঁড়িয়ে পড়ে, একবার তেলিপুকুরের দিক থেকে আসা টোটোর সন্ধানে তাকায়। আজ রাস্তা যেন তুলনায় একটু ফাঁকা।
“একবার নাজমার খোঁজ নিস” দেবু সগোক্তির মতই কথা বলে ওঠে সামনের পানের দোকানের জটলাটার দিকে তাকিয়ে ।নন্দিতা আচমকা ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায় দেবুর দিকে।
“হুম, দেখি ওবেলা ফোন করব ভাবছি” নন্দিতা জবাব দেয়।
“কেউ অ্যারেস্ট হয়েছে বলে শুনেছিস?” বিশ্বজিৎ দেবুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।
“নাঃ , তোরা ভালো জানবি, পেপারে কিছু দিয়েছে?”
“ওই গোষ্ঠিদ্বন্দ না কি মনে করছে পুলিশ… ব্যাস… তদন্ত চলছে …”
এইসময় একটা টোটোকে দাঁড় করায় নন্দিতা। টোটো ওয়ালার সঙ্গে কি কথা বলে উঠে পরে ওদের দিকে হাত নাড়ায়, ইসারায় ফোন করবে বলে। টোটোটা আরও দুজনকে নিয়ে এগিয়ে যায়।
বিশ্বজিৎও সাইকেলে উঠে প্যাডেলে পা রাখে। “শোন তাড়াতাড়ি বাড়ি পালা, চাপ নিস না ও সব চাপা পড়ে যাবে কদিনেই …” দেবুর উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে সাইকেলে এগিয়ে যায় শাঁখারি মোড়ের দিকে।
দেবু একা একটু দাঁড়িয়ে সামনের পানের দোকানের দিকে রাস্তা পার হয়ে এগিয়ে যায়। সিগারেট শেষ, নিতে হবে। সিগারেট ধরিয়ে হাঁটতে থাকে, এখান থেকে মাস্টারের দোকান একটুখানি রাস্তা, সাইকেলে না চেপে হেঁটে গেলেই হবে, ওর এখন একটু হাঁটতে ইচ্ছে করছে।
“আরে এসো এসো দেবুবাবু! অনেকদিন পর পায়ের ধুলো পড়ল গরীবখানায়, বোসো …চা বলি?” দোকানের বারান্দায় উঠতেই মাস্টার বলে ওঠে হাসতে হাসতে। দেবু সম্মতির ঘাড় নাড়ে , একটু চা হলে মন্দ হয় না এখন। ভিতরে ঢুকে পেতে রাখা মাদুরে পা ছড়িয়ে বসে পড়ে। মাস্টারের শাগরেদটা নজরে এলোনা, আসেপাশে আছে কোথাও!
সেই বাচ্চা ছেলেটা চা নিয়ে এলো একটা তোবড়ানো এল্যুমিনিয়ামের থালায়, গায়ের গেঞ্জিটা নতুন মনে হচ্ছে! পিটপিট করে একবার দেবুর দিকে তাকিয়ে হাসল, এ কদিনে আসা যাওয়া চা খাওয়ায় দেবুকে ও চিনে নিয়েছে। আগের রাউন্ডের গ্লাসগুলো গুছিয়ে নিয়ে চলে গেল।
“বুঝলে দেবুবাবু, একটা কাজের খবর আছে …তাই তলব দিলাম তোমায়। যদি বলো তো কথা বাড়াই …”
“কাজ! …কিরকম?”
“ বড় ব্যাবসায়ীর ম্যানেজারি করতে হবে, কোথায় লাগাবে জানিনা… ওই… কাজের লোকেদের নজর রাখা , হিসেব বুঝে নেওয়া , যেমন হয় আর কি! করবে ?…মালকড়ি খারাপ দেবে না আশা করি…” এতটা বলে মাস্টার দেবুর দিকে তাকিয়ে থাকে। দেবুও একটু অবাকই হয়, মাস্টার যে কাজের সন্ধান নিয়ে কথা বলার জন্য ওকে দেখা করতে বলবে এটা ওর চিন্তার ধারেপাশেও আসেনি!
“কি বলি বলতো! কাজের কথা সবসময়ই ভালো খবর …কিন্তু …” দেবু ভেবে পায় না এখন কি বলা উচিত ওর, ও কি সত্যিই প্রস্তুত কোথাও কাজে লেগে যাওয়ার জন্য! নাঃ এখনও তেমনভাবে ভেবে দেখেনি কিছু। তবে মনে হয় মাঝে মধ্যেই, ধুস এভাবে বাবার দেওয়া ওই মাসগেলে কয়েকশো টাকার হাত খরচে কি চলে নাকি আজকাল! …বন্ধুদের কাছে মাঝে মধ্যেই প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে যায়! যদি নিজের কয়েক হাজার পকেটে থাকত তাহলে বেশ হতো, বাবার কাছে বার বার টাকার জন্য কৈফিয়ত দিতে হতো না, আর বাবা্র ঐ ছাপোষা মেন্টালিটির সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করা অসম্ভব! কিন্তু এখন এই সেকেন্ডইয়ারের মাঝে!…কি করে! …ধুর পাশ করেই বা কি ছিঁড়ে নেবে ও! এলোমেলো চিন্তা ভিড় করতে থাকে দেবুর মাথায়।
“আরে কি ভাবছ অত দেবুবাবু! … লেগে পড়ো, ভাল না লাগলে ছেড়ে দিও, কে আটকেছে? আজকাল এরকম সুযোগও সবাই পায় না।”
“কার কাছে যেতে হবে, কিসের কাজ ,কত দেবে …এগুলো জানা দরকার মাস্টার …”
“গদাই ঘোষকে চেনো? … মিল মালিক, খাদান …আরও কত কি আছে!”
“হ্যাঁ , নাম শুনেছি , সেতো বেশ বড় হনু! …তার কাছেই নাকি?”
“হ্যাঁ গো… লোক শুনেছি জব্বর ব্যাবসাদার, তবে ভালোর সঙ্গে ভালো …এই গুন রয়েছে”
দেবু চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবতে থাকে, কি কাজ হতে পারে! অবশ্য বড় ব্যাবসায় লোকও লাগে অনেক রকম। আর গদাই ঘোষের কথা তো ও শুনেইছে, ভালো মন্দ দুইই। সব বড় ব্যাবসাদার বা সফল লোকেদের নিয়েই বাজারে নানা গল্প চালু থাকে, সেগুলোওকে দেবু বেশী পাত্তা দেয় না। ছাপোষা পাবলিক নিজেরা কিছু করতে পারেনা তাই অন্যের সাফল্যের চমকধমক দেখে গায়ের জ্বালায় এসব বলে বেড়ায়, ওতেই আনন্দ পায়! কিন্তু ফাইনাল ইয়ারে কাজে ঢোকা… আর একদিকে বাবা কিভাবে নেবে ব্যাপারটা সেটাও চিন্তার!…অথচ কাজের ইচ্ছার কথা সেই বলেছিল মাস্টারকে ,মাস্টার কথা রেখেছে।
“বুঝলে মাস্টার, তুমি যখন এতটা করেছো, একবার দেখাই নাহয় করি! কি বলো”
“আরে আমিও তো তাইই বলছি …একবার দেখতে দোষকি! …আর লাইনে থাকলে তুমিও ব্যাবসার ঘাঁতঘোত বুঝে যাবে…।”
মাস্টার দেবুকে গদাই ঘোষের অনেক ফিরিস্তি শোনাতে থাকে। কিভাবে সামান্য চালওয়ালা থেকে আজ এই জায়গায় পৌঁছেচে গদাই ঘোষ!কিছু সাংঘাতিক ঘটনার গল্প, শুনতে শুনতে দেবুর মনে হচ্ছিল এতো খুবচেনা হিন্দি বা বাংলা সিনেমার স্ক্রিপ্ট! এরকমও হয়ও নাকি! …ধুস নির্ঘাৎ কিছুটা জল মেশাচ্ছে মাস্টার!
বিকেল ঢলে এসেছে , রাস্তায় লোক একটু বেড়েছে, রুটের বাস কমে মাল বোঝাই ট্রাকের সংখ্যা বাড়ছে আরামবাগ রোডে। উঠে পড়ে দেবু …
“মাস্টার কবে কখন যাবে জানিও একদিন আগে, সেই মতো প্রোগ্রাম বানাবো …আজ উঠি সন্ধ্যা হয়ে আসছে, বাড়ি ফিরতে হবে …”
“সে আমি জানিয়ে দেবখন, হ্যাঁ তুমি রওনা হও … তবে আমি বলি কি বাড়িতে একটু শুনিয়ে রেখো, দেখো ভালই হবে …”
“হুম …দেখি” দেবু একটা বিড়ি মাস্টারের কাছ থেকে নিয়ে ধরিয়ে সাইকেলে উঠে পরে, সাইকেল গড়াতে থাকে তেলিপুকুর ফ্লাইওভারের দিকে।
ব্রীজের আশে পাসে আজ একটু লোকজন কম মনে হলো দেবুর। কালকের ঘটনার জের নিশ্চয়ই! …এতক্ষন মাস্টারের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল বলে সেভাবে ঘটনার কথা আর ভিড় করেনি মাথায়, আবার ফিরে আসছে কালকের ঘটনার দৃশ্য, বার বার, কাল থেকে কয়েকশোবার দেবুর মস্তিষ্কে গোটা ঘটনাটার রিপ্লে হয়েছে, প্রতিবারই চমকে উঠেছে ও, এখন কিছুটা সয়ে এসেছে মনে হচ্ছে ওর। গোটা ব্যাপারটা যে পরিকল্পনা করেই করা সেটা বুঝতে পারছে, তা নাহলে এত ধীরেসুস্থে এসে গুলি করে একজনকে মেরে আবার ঠিক একই রকম ধীরেসুস্থে চলে যাওয়া যায়! আর যাকে মারলো সে কিছু বুঝে উঠে নিজেকে বাঁচানোর সামান্য সুযোগ পর্যন্ত পেল না!
ভাবতে ভাবতে কখন বাদুলিয়া চলে এসেছে দেবু খেয়ালই করেনি! “নিউ ব্যানার্জি ফার্মেসি”-র জ্বলে থাকা আলো রাস্তার অনেকটা আলোকিত করে রেখেছে। বিপিনদাকে দেখা যাচ্ছে না, কাউণ্টারে একটা অল্প বয়সী ছেলে বসে রয়েছে, সম্ভবত বিপিনদার ভাগনা, দেবু শুনেছে কদিন বিপিনদা ভাগনাকে এনে দোকানে কাজে লাগিয়েছে। দোকানের আড্ডার দুজন রয়েছে, মলয়দাকেও দেখা যাচ্ছে না! কোথাও মোড়োলি করতে গেছে মনে হয়! দেবু নিজের গতিতেই পেরিয়ে যায় মোড়, কিছুটা এগোতেই ওদের বাড়ির আলো দেখতে পায়। ওদের বাড়ির আলো ঠিক এখান থেকেই প্রতিদিনই দেখতে পায় দেবু … আর একটা প্রশান্তির দীর্ঘশ্বাস নেমে আসে ওর , মনে হতে থাকে বাড়িতে মণি কি করছে! মা কি করছে!…আর বাবা…!

ক্রমশ…

লেখা পাঠাতে পারেন

আগের পর্ব পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

ই ন্দ্র নী ল   ব ক্সী-র ধারাবাহিক উপন্যাস–“চোরাবালি”(পর্ব-৯)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here