প্রাচীন বাংলার ধর্ম সূত্র, জাতি জিজ্ঞাসা ও জনপদ–লিখছেন দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী

0
235

প্রাচীন বাংলার ধর্ম সূত্র, জাতি জিজ্ঞাসা,                         জনপদ

                                                                                   ছবিঃ গৌতম মাহাতো

                               লিখছেন দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী

                               ১৮

 আমাদের মহাকাব্য  তমলুকের বসবাসকারীদের সুহ্ম্ থেকে আলাদা করেছে, আবার ‘দশকর্মচরিত’
দাম লিপ্তকে (Tamralipta or Tamluk) এই সুহ্ম রাজ্যের মধ্যে ধরেছেন। ১২তম শতাব্দীর ধোয়ির
পবনদূত (” The pavanaduta of Dhoyi) গঙ্গা নদীর  তীরবর্তী স্থানে সুম্ভ দেশের কথা বলেছেন, এবং এই ভূমিকে  রঘুকূলগুরুর ( the Sun) পবিত্র মুরারি (Vishnu), এবং অর্ধনারীশ্বর ( combined form of Sivan and his consort) আখ্যা দিয়ে শোভিত করেছেন। এই শহরকে শৈব ভূমি ( Chandrardhamauli) বলা হয়েছে, এই নদীর বাঁধ রাজা বল্লাল সেন কে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই সম্বন্ধে বিভিন্ন লেখকরা  যা সবিস্তারে লিখেছেন 
 এই হুগলি জেলার ‘ত্রিবেদী- সপ্তগ্রাম-পান্ডুয়া ছিল
সুম্ভদেশের কেন্দ্রে    ”  Nilakantha equates Suhma and Radha.According to the Digvijaya- prakasha the last mentioned territory lies to the east of Birbhum and to the North of the river Damodar. “The land of Diamond”Should be excluded from that part of Radha  while was known as Suhma” 
   
আবার অতীতের মহাকাব্য  যুগে এবং তার পরেও 
যে সব স্থানে কবিরা বাস করতেন সে সম্বন্ধে আলোকপাত করলে দেখা যায়, এই স্থান বানপর্বের তীর্থ যাত্রার মধ্যে নেই।  আমরা এও উল্লেখ করেছি যে পবিত্র নদী করতোয়া একসময় উত্তর বঙ্গের পুন্ড্রনগর (মহাস্থানগড়)  পাশ দিয়ে বহমান ছিল এবং গঙ্গা নদী সমুদ্রের যে স্থানে খালি হ’ত( gangayastatra rajendra sagarasya cha
Sangame). 

হুগলি জেলার খানকে নিবাসী প্রসিদ্ধ পণ্ডিত উমেশচন্দ্র বটব্যাল মহাশয় দীর্ঘতমা-ঋষি খৃষ্ট-পূর্ব
১৬৯০ অব্দে বর্তমান ছিলেন বলিয়া সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। (গৌড়ের ইতিহাস-রজনীকান্ত চক্রবর্তী) 
মহাভারত ব্যতীত বায়ুপুরাণ, মৎসপুরাণ, মার্কণ্ডেয় পুরাণ প্রভৃতি ভারতের প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে উক্ত পাঁচটি রাজ্যের নাম একত্রে দৃষ্ট হয়। ঐতিহাসিকগণ ও প্রত্নতত্ত্ববিদগণ উক্ত জনপদগুলির যে সীমা নির্দেশ করিয়াছেন, তাহা
হইতে জানা যায় যে, বর্ত্তমান  রাজসাহী ও ভাগলপুর বিভাগের সন্নিহিত স্থান, প্রাচীন অঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। উত্তরে ভাগীরথী হইতে
এবং দক্ষিণে গোদাবরী নদী পর্যন্ত কলিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং অঙ্গ ও কলিঙ্গের পূর্ব দেশটি
বঙ্গ রাজ্য নামে প্রখ্যাত ছিল। কানিংহাম, উইলসন প্রভৃতি মনীষিবৃন্দ সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, বর্তমান রাজসাহী বিভাগের উত্তর- পশ্চিম দিকের ভূমিখণ্ড
 অর্থাৎ অঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণাংশ  পরবর্তীকালে পুণ্ড্র
রাজ্য নামে অভিহিত হইয়াছিল এবং কলিঙ্গ রাজ্য
উত্তর পূর্ব্বাংশ লইয়া সুম্ভরাজ্য  গঠিত হ ইয়াছিন। 
….  উক্ত আলোচনা হইতে স্থিরীকৃত হইয়াছে যে, বর্তমান হুগলি, হাওড়া, বর্ধমান, 
বীরভূম প্রভৃতি জেলা গুলি প্রাচীন কালে সুম্ভ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। 

‘আধুনিক বাংলা বা বাংলাদেশ প্রাচীনকালে চারটি
বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত ছিল- বরেন্দ্রী, সুম্ভ (বা রাঢ়া), বঙ্গ ও কামরূপ। ‘গৌড় বলতে  সাধারণত
রাঢ়- বরেন্দ্রী অর্থাৎ উত্তরপূর্ব বাংলা বোঝাত। 
( সুকুমার সেনঃ প্রাচীন  বাংলা ও বাঙালী, ১৯৭২)

বাংলাদেশের প্রাচীন জন বিভাগ ও জনপদ সম্বন্ধে
পরিস্কার ধারণা না থাকলে বঙ্গসংস্কৃতির রূপায়ণের ধারা বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। প্রাচীন
সুহ্ম বা রাঢ়দেশ ই  পশ্চিমবঙ্গ । 

Reference:
         ” The History of Bengal”-1943
           Dr(professor)R. C. Majumdar

            হুগলি জেলার ইতিহাস -১৯৪৮
             সুধীরকুমার মিত্র বিদ্যাবিনোদ
               
               বঙ্গ সংস্কৃতির রূপায়ণ -১৯৭৬
               অধ্যাপক বিনয় ঘোষ
             
             বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য-২০০৪
               ড:( অধ্যাপক) প্রণব রায়
 
                                                           ক্রমশঃ…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here