যে জন থাকে প্রানের মাঝে

0
33
পরিচিতিঃ সনৎকুমার বটব্যাল ও হরিপদ কেরানী ছদ্মনামে ২০১৫ সাল থেকে সম্পাদনা করে চলেছেন একটি মননশীল  সাহিত্য পত্রিকা ‘পৃথ্বী’। থাকেন তমলুকে। জন্মসুত্রে পুর্বমেদিনীপুরের মানুষ। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। হরিপদ কেরানী ছদ্মনামে দীর্ঘকাল লেখালিখি করে আসছেন। ২১/১১ তেঘরিয়া, নন্দনকানন, কলিকাতা-৭০০১৫৭। বাইফোকালিজম্-এ আজ একটু অন্য স্বাদের লেখা। লেখকের কথায়-“এই আমার সোনার গাঁ। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার প্রাচীন তাম্রলিপ্ত(অধুনা তমলুক) বন্দর-নগরীর গা ঘেঁষে যার জন্ম।রূপনারায়ণ, ভাগীরথী ও হুগলির সঙ্গমস্থল থেকে হাঁটাপথে
ছয় কিলোমিটার। প্রত্যন্ত অঞ্চল। মেঠো পথ। লাল মোরাম এখন কোথাও কোথাও কালোপিচ রাস্তার অস্তিত্ব চোখে পড়ে। গাঁয়ের নাম-‘ দেউলপোতা’।ডাকঘর- দেউলপোতা, ভায়া- গেঁওখালি, থানা- মহিষাদল, মহকুমা- ( অবিভক্ত তমলুক) বর্তমান- হলদিয়া, জেলা- পূর্ব মেদিনীপুর(সাবেক মেদিনীপুর)।আমার গাঁয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে
বহু ঘটনার সাক্ষী হাজার বছরের পুরানো বুড়ো বট। আমার রং বেরং এর দিনগুলির সাক্ষী। এই গাঁয়ের পাশের গাঁগুলি হোল ভাঙ্গাগড়া,
বাদুড়,বাবুপুর,ধর্মপুর,ধামাইতনগর,ইচ্ছাপুর,হীরারামপুর,শ্রীকৃষ্ণপুর,গোপালচক,তেতুঁলবেড়্যা,জগতপুর,বেতকুণ্ডু,মিরপুর ইত্যাদি। এখানে পাওয়া যায় চাষের সোনালী ধান,নদীর রূপোলী মাছ, ভিটেমাটিতে আবাদ করা লটে,পালং,ঢেঁড়স, পোকা বেগুন,মাচারপুঁইশাক, ঝিঞে,লাউ,কুমড়ো, পুকুরের পাড়ে অনাদরে বেড়ে ওঠা কচুশাক, থানকুনি, কলমি, কুলেখাড়া, শুসনি, ব্রাহ্মি আরও কত কি।আমার অতীত, স্মৃতির সরনী বেয়ে ফিরে যাওয়া আমার মাতৃ জঠরে। গরীব বামুনের ছেলে।পুরোহিত বাবা দশ-বারোখানা গাঁয়ের যজমানি সেরে যখন বাড়ী ফিরতেন, মা তখন অপেক্ষায় চালের জন্য ।মাটির উনুনে টগবগ করে ফুটছে জল। হাঁড়িতে রসদ বাড়ন্ত। আমি, আমার পরের ভাই মেঠো পথ ধরে হাইস্কুলে চলে গেছি না খেয়ে। ছোট দুই পিঠোপিঠি ভাই-বোন উনুনের ধারেই ঘুমিয়ে পড়েছে ক্ষিদের জ্বালায়। বাবা এলে রান্না চড়বে।স্কুল থেকে ফিরে ঐ একবার ই কোনো দিন নুন আর ফ্যানভাত,আবার কখনো আলু সেদ্ধ গরম ভাত।এই আমার রোজনামচা ।পরের দিন উনুনে হাঁড়ি চাপবে তার গ্যারান্টি নেই। কোন কোন দিন একটু আটা ঘাঁটা বা স্কুলে দেওয়া গমচাল( আধ ভাঙা গম,আমাদের সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়া হোত) ভাজা,সয়াবিন ঘাঁটা বা চক্রবর্তীদের পুকুর পাড়ের বেওয়ারিশ শুশনি, কলমি,কুলেখাড়া সেদ্ধ।আবার কিছু না থাকলে উপোস।উপোসী পেটে ঘুম আসত না। সুতরাং আপনারা যে গ্রহে বাস করেন আমি বসবাস করি সেখান থেকে অনেক আলোকবর্ষ দূরে। যখন আঠারো বছরের আমি কলকাতার রাজপথে খালি পায়ে হাঁটছি। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের প্রজ্জ্বোল দার ক্যান্টিনে, কোনো কোনো দিন এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বদান্যতায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের এমারজেন্সি রুমে ( সবসময় রুগি এসে বসে যেখানে), আবার ঐ ভদ্রলোকের রাতের ডিউটি না থাকলে শিয়ালদহ স্টেশনের প্লাটফর্ম ই রাতের ঠিকানা ।দিকদিশা হীন জীবনের পাণ্ডুলিপি এভাবেই লেখা হয়ে গেল ।পূরবী সিনেমার সামনে ফুটপাতে কমল দার সহকারী হয়ে হকারি।তারপর কলকাতা ছেড়ে ফিরে আসা মেদিনীপুরের অজ গাঁয়ে।লোকের বাড়ি চাষ-আবাদ,পানের বোরোজে মাটি দেওয়া, গাছ নামানো, মেলায় বেলুন বিক্রি।আরও কতো কি। গলায় পৈতে থাকায়, একটা মস্ত সুবিধে। মন্ত্র জানি বা না জানি পাথরের গায়ে মাঝে মাঝে ফুল ছুঁড়ে দু- চার টাকা রোজগার ।নানা এ কোন গল্পকারের ছোট গল্পের অংশ বিশেষ নয়। আজকের হরিপদর জীবনের পাঁচালি ।থাক সে কথা। আপনাদের মতো আমার শিক্ষার প্রশান্ত মহাসাগরীয় ব্যাপ্তিও নেই,নেই জ্ঞানের অতলান্তিক গভীরতা, নেই আসমুদ্রহিমাচল পরিচিতি। মেদিনীপুরের এক অজ গাঁয়ে এক অনামি জুনিয়র হাই স্কুলের মাছিমারা কেরাণি থেকে হরিপদ কেরানী তে উত্তরন। আপনাদের অশেষ কৃপায় আমার মতো এক অভাজন একটি ছোট ‘লিটল ম্যাগাজিন’ প্রকাশ করে। নিজের তাগিদে। আপনাদের সহযোগিতা,সাহচর্য ও শুভেচ্ছা কামনা করি। আপনাদের মতো গুণীজনদের সান্নিধ্য আমাকে সমৃদ্ধ করবে। এবারের বিষয়- ‘স্বাধীনতা-৭৫’ আমার গভীর শ্রদ্ধা ও সাংস্কৃতিক শুভেচ্ছা নেবেন। sanatkumarbatabyal1885@gmail.com

স ন ৎ কু মা র  ব ট ব্যা ল-র জীবনীচর্চায়

যে জন থাকে প্রানের মাঝে

আজ ভারতবর্ষের এক কৃতি সন্তানের কথা আপনাদের বলব। যিনি শুধুমাত্র একজন দেশপ্রেমিক ছিলেন এমনটা নয়।তিনি ছিলেন উদারমনস্ক, শিক্ষাবিদ,ভারতবর্ষে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলনের পথিকৃত বা ভগীরথ বললে অত্যুক্তি হবে না ।

শ্রী,সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।

ভূমি স্পর্শঃ-৫ ই জুন, ১৮৬৫ সাল,
গ্রাম- বাণীপুর ,
জেলা-হুগলি,
ব্রিটিশ ভারত

অমৃতলোকে যাত্রাঃ- ১৮ ই এপ্রিল(মতান্তরে ১৯ শে এপ্রিল) ১৯৪৮ সাল, বারানসী, উত্তর প্রদেশ, ভারত।

বাবা- কৃষ্ণনাথ মুখোপাধ্যায়।
স্ত্রী-চারুলতা মুখোপাধ্যায়।
ছেলে- সুব্রত মুখোপাধ্যায় ।
মেয়ে- রেণুকা রায় ।

তিনি ছিলেন অসম্ভব মেধাবী, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, নম্র, ভদ্র, বিনয়ী, সর্বসাধারণের মধ্যে শিক্ষার
প্রসারে অগ্রণী সৈনিক। সতীশচন্দ্র ভারতে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথিকৃৎ ছিলেন। তৎকালীন সময়ে বাংলা দেশের বিদ্বজ্জনেরা একথা একবাক্যে
স্বীকার করেন।
সতীশচন্দ্রের জন্ম হুগলী জেলার বানীপুরে। পরবর্তীতে কলকাতার ভবানীপুরের সাউথ সুবার্বান স্কুলের তিনি ছাত্র ছিলেন। সতীশচন্দ্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। অশ্বিনীকুমার দত্ত, শিবনাথ শাস্ত্রী, বিপিনচন্দ্র পাল, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (তাঁর সহপাঠী), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রী অরবিন্দ, রাজা সুবোধ মল্লিক, নরেন্দ্রনাথ দত্ত ওরফে স্বামী বিবেকানন্দ(তাঁর সহপাঠী), কালীপ্রসাদ চন্দ্র (স্বামী অভেদানন্দ)এর মত মানুষদের সাথে তাঁর ওঠাবসা ছিল। তিনি পণ্ডিত শশধর তর্ক চূড়ামণির “ষট-দর্শন” (“হিন্দু দর্শনের ছয়টি বিদ্যালয়”) শীর্ষক বক্তৃতা শুনতে অ্যালবার্ট হলে উপস্থিত ছিলেন। এই সভার সভাপতিত্ব করেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। যার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “ধর্মনিরপেক্ষ বা ধর্মীয়, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য এবং অন্যান্য সমস্ত পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা এবং উপযোগিতার সাথে বাঁচুন”। সতীশচন্দ্র তীব্র ধর্মীয় স্বভাবের হিন্দু জীবন, চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসের উপর জোর দিয়েছিলেন।

তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে-ভর্তি হয়ে ১৮৮৬ সালে এমএ পাশ করেন। এবং ১৮৯০ সালে বি.এল. ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তিনি নিজের নাম কলকাতা হাইকোর্টে উকিল হিসাবে নথিভুক্ত করান। ১৮৮৭ সালে তিনি বহরমপুর কলেজের ইতিহাস ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৮৯৫ সালে তিনি উচ্চতর পড়াশোনার বিকল্প পদ্ধতির প্রথম প্রচেষ্টায় ভাগবত চতুষ্পাঠী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সতীশচন্দ্রের বাবা কৃষ্ণনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিচারপতি দ্বারকানাথ মিত্রের শৈশবের বন্ধু এবং সহপাঠী। মিত্র তাঁকে কলকাতা উচ্চ আদালতে সরকারী নথির অনুবাদক হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন। মিত্র প্রত্যক্ষবাদী মানবতা ধর্মের বিশ্বাসীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ছিলেন। তিনি কঁৎ দর্শনে বিশ্বাসী, মানুষ এবং সমাজের সেবক ছিলেন ।

নাস্তিক কৃষ্ণনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর দুই ছেলে , তিনকড়ি ও সতীশের মনে ও এই আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজে কঁৎ এবং তাঁর দর্শন নিয়ে ভারতের মধ্যে প্রথম লিখেছেন তাই নয়, যোগেন্দ্রচন্দ্র ঘোষ এবং রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রবল উদ্দীপনাপূর্ণ প্রত্যক্ষবাদী বন্ধুও তাঁর ছিল। ১৮৭৪ সালে, বঙ্কিম তাঁর বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রত্যক্ষবাদ সম্পর্কিত শেষোক্ত জনের প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। এটি শুরু হয়েছিল এই ভাবে, “আমাদের দেশে সত্যিকারের শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে কঁতের দর্শন নিয়ে প্রচুর চেতনা রয়েছে।” মনস্তাত্ত্বিক পরিশোধন নিয়ে লেখার সময় বঙ্কিম লিখেছিলেন– “যিনি মনস্তাত্ত্বিক ভাবে শুদ্ধ হয়েছেন তিনি হলেন সেরা হিন্দু, সেরা খ্রিস্টান, সেরা বৌদ্ধ, সেরা মুসলিম, সেরা প্রত্যক্ষবাদী।”
১৮৮৪ সালে, তাঁর দেবী চৌধুরানী উপন্যাসের উপস্থাপনায়, বঙ্কিম ইতিবাচক ধর্মের প্রশ্নোত্তর থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন– “মানুষের অগ্রগতির সাধারণ আইন (…) এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যে মানুষ আরও বেশি ধর্মীয় হয়।”
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় শুধুমাত্র একজন জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন না। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ছিলেন সতীশচন্দ্রের সহপাঠী। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শিবনাথ শাস্ত্রী, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিপিনচন্দ্র পাল, অশ্বিনীকুমার দত্ত, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ খ্যাতনামা ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তিনি তাঁদের দ্বারা বিভিন্নভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। শিক্ষাবিষয়ক আত্মনির্ভরতার দৃষ্টান্তস্বরূপ সতীশচন্দ্র ডন সোসাইটি(১৯০২) প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর সম্পাদক হন। এটি ছিল ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের রিপোর্টের প্রতিবাদে সৃষ্ট একটি অরাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। বঙ্গীয় ছাত্র যুবকদের আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিতকরণ, তাদের মধ্যে ধর্মীয় ও নীতিশিক্ষার বিকাশ ঘটানো, মানসিক শক্তিবৃদ্ধি ও চরিত্রগঠনই ছিল এর উদ্দেশ্য। এছাড়া জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ও দেশপ্রেমের উদ্বোধন এবং হাতে-কলমে কারিগরি শিক্ষা ও স্বদেশী শিল্পের সার্বিক উন্নয়নও এ প্রতিষ্ঠানের আদর্শ বলে পরিগণিত হতো। শিক্ষাবিষয়ে স্বাদেশিকতা প্রবর্তনে ডন সোসাইটির দান অপরিসীম। ১৯০৫ সালের ৫ নভেম্বর সোসাইটির আহবানে জাতীয় শিক্ষা উদ্বোধনের জন্য এক বিরাট জনসভার আয়োজন করা হয়। বিপুল জনসমাবেশের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং হীরেন্দ্রনাথ দত্ত সে সভায় বক্তব্য রাখেন। সতীশচন্দ্র ছাত্রদের প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ ও সেখানকার পরীক্ষা বর্জনের আহবান জানান।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ(NCE, ১৯০৬) প্রতিষ্ঠায় তিনি প্রভূত অবদান রাখেন। এর অধীনে Bengal National College স্থাপিত হলে, বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ এর প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন এবং সতীশচন্দ্র হন তত্ত্বাবধায়ক। ১৯০৭ সালে অরবিন্দ পদত্যাগ করলে সতীশচন্দ্র অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন, কিন্তু অসুস্থতার কারণে পরের বছরই পদত্যাগ করেন।
১৯০৫ সালের ১০ অক্টোবর জারিকৃত ‘কারলাইল সার্কুলার’ (Carlyle Circular)-এর বিরুদ্ধেও সতীশচন্দ্র প্রতিবাদ করেন। স্বদেশী আন্দোলনের সূত্রপাত ও সফলতায় সতীশচন্দ্রের অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি ছাত্রদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের ধারণা প্রচার করেন।
র১৯০৫ সালে স্বদেশী আন্দোলন শুরু হওয়ার পূর্ব থেকেই স্বদেশী শিল্পায়নের জাগরণে ডন সোসাইটি বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে। এ সময় সতীশচন্দ্রের সম্পাদনায় মাসিক ‘ডন’ (১৮৯৭) জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণ ও প্রচারে বিশেষ সুনাম অর্জন করে। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শিক্ষিত যুবকরা এ পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখেন এবং নানা স্থানে বক্তৃতার মাধ্যমে ছাত্রসমাজকে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন। ডন পত্রিকা ছিল তাঁদের মুখপত্র, যা শিক্ষাক্ষেত্রেও বিরাট অবদান রাখে। সতীশচন্দ্র ১৯১৩ সাল পর্যন্ত এটি সম্পাদনা করেন। ‘বন্দে মাতরম্’ নামক দৈনিক ইংরেজি পত্রিকার সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। গান্ধীজির অহিংস আন্দোলন (১৯২২) তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এ আন্দোলনে গান্ধী গ্রেফতার হলে তিনি সবরমতীতে যান এবং কিছুদিন Young India পত্রিকা প্রকাশে সহায়তা করেন। ১৯৩০ সালে তিনি রাজেন্দ্রপ্রসাদের বিহার বিদ্যাপীঠ পরিদর্শন করেন এবং সেখানে কিছুদিন অবস্থান করেন। সতীশচন্দ্র ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক ও ধর্মপ্রাণ সাধু পুরুষ। তবে তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামি, বর্ণপ্রথা এবং প্রাদেশিকতার বিরোধী ছিলেন। শিক্ষাবিস্তার ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষে তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ ব্রতী। সময়োপযোগী উপযুক্ত মানুষ তৈরি করার জন্যই তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯৪৮ সালের ১৮ই এপ্রিল/( মনান্তর ১৯ শে এপ্রিল) কাশীতে তিনি অমৃতলোকে যাত্রা করেন। আজ এই মহামানবের জন্মদিন ।যাঁর
সার্ধশতবর্ষ পেরিয়ে গেছে ।কেউ মনে রাখেনি ।কিন্তু এই মহামানবের কীর্তি ভোলার নয়। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন।ভারতে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় তাঁর যে অবদান, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

আজকে যাঁরা নিজেদের স্বাধীন ভারতবর্ষের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত বলে গর্বিত হন,যে মানুষটি তাঁর নিজের জীবনকে
এই কাজে সঁপে দিয়ে ছিলেন, তাঁকে একবার স্মরণ করবেন না? তবুও স্মৃতির স্মরণী ধূলায় ধূসর ।
আসুন আজকে এই মহামানবের শুভ জন্মদিনে আমরা নতজানু হয়ে শ্রদ্ধা জানাই, আভূমি প্রনাম জানাই। সতীশচন্দ্রের মৃত্যু নেই ।তিনি আমাদের হৃদয়ের গভীরে মৃত্যুঞ্জয়।

তথ্যসূত্রঅনুলিখন-বন্ধুবর হিমাদ্রি বর্মন
(সৌজন্যে : বাংলাপিডিয়া)

 

লেখা পাঠাতে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here