ষষ্ঠ পর্বঃঃ রুমির কবিতা–অনুবাদ – তৌফিক হোসেন

0
148

                        অনুবাদ: তৌফিক হোসেন

সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতিঃ মৌলানা জালালউদ্দিন রুমি

(1207-1273) ছিলেন শ্রেষ্ঠ ও কিংবদন্তিসম অতীন্দ্রিয়বাদী সুফি কবি। জন্ম আফগানিস্তানের বল্খে।স্থিতু হন এশিয়া মাইনরের কোনিয়ার তুরস্কে।তিনি লিখেছিলেন পার্সি ভাষায়।’মসনবি’ তাঁর শ্রেষ্ঠ তথা বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ।কবি ছাড়াও তিনি একজন সুফি ধর্মগুরু ছিলেন।
[ কোলম্যান বার্কসের ইংরেজি অনুদিত Bird Song কবিতার বই থেকে কবিতাগুলি অনুবাদ করা হয়েছে।]

জালাল উদ্দিন রুমি

তৌফিক হোসেন

মূলতঃ কবি।লিটল ম্যাগাজিনেই তাঁর যাপনভূমি।নিজেও “বিভাসা” নামের একটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে থাকেন।তৌফিকের বরাবরের টান অনুবাদ সাহিত্যে।তাই তিনি বারবার ছুটে যান সেদিকে।এবার তৌফিক ডুব দিয়েছেন কবি রুমিতে।

একান্ন

মানুষ হওয়ার কষ্ট তুমি কী করে বুঝবে,
তুমি যদি শুধু উড়ে যাও আশমানী পূর্ণতায়?

কোথায় বপন করবে তোমার বিষাদের বীজ?
কর্মীদের দরকার আঁচড়ানোর মাটি,
অনির্দিষ্ট ইচ্ছার আকাশ নয়।

বাহান্ন

ওঠো।ঘোর কেন্দ্রকে ঘিরে
যেমন তীর্থযাত্রীরা কাবার চারদিকে।

স্থির থাকা হোল যেভাবে একদিন
মাটিতে মাটি মেশে ঘুমে ঘুমে।

যেখানে গতি আমাদের জাগিয়ে তোলে
আর ঢেলে দেয় তাজা আশীর্বাদ।

তিপান্ন

তুমি হাঁটো এই ভাব নিয়ে,
‘যথেষ্ট হয়েছে ‘।

শুধু ভ্রুকুটি আর কাটা-কাটা কথা দিয়ে
আমার প্রেমকে বিদায় দেওয়া যাবে না।

এটা একটা অদম্য পাখি,
যাকে কখনো খাঁচায় ভরা যায়নি,
যে কখনো ভয় পায়নি।

চুয়ান্ন

কল্পনা করা হোল
অন্ধগলিতে ঘোরার মতো
বা রক্ত দিয়ে চোখ ধোওয়া।

তুমিই সত্য
আপাদমস্তক। এখন,
আর কী তুমি জানতে চাও?

পঞ্চান্ন

তুমি যে জন্ম নাও আর রহস্য বয়ে আনো
সেই তোমার বজ্রকণ্ঠ আমাদের অতীব সুখী করে।

হৃদয়-সিংহ, গর্জন করো,
ছিঁড়ে ফেলো আমাকে।

ছাপান্ন

প্রেম সমুদ্রকে উথালপাথাল করে
আর তোমার ঝোড়ো মেঘের আলগা বসনে
বৃষ্টির নকশা বোনে।

প্রেম বজ্র
আর আমাদের সাড়া –আহ্।

সাতান্ন

ম্লান সূর্যের আলো,
ম্লান দেয়ালও।

প্রেম দূরে সরে যায়।
আলো বদলায়।

যা চেয়েছিলাম
তার চেয়ে বেশি লাবণ্য চাই।

আটান্ন

তোমার আলোয় শিখি ভালোবাসতে।
তোমার রূপে,কবিতা লিখতে।

তুমি নেচে যাও আমার বুকের মাঝে,
তোমার দেখা কেউ পায় না।

তবে আমি মাঝে-মধ্যে পাই,আর
ঐ দর্শন হয়ে যায় এই শিল্প।

ঊনষাট

তুমি বসন্ত সাজানো
আমরা দূর্বা বসন্ত লতানো।

তুমি মহারাজ লব্ধ
আমরা ভিক্ষুক রাস্তায় সারিবদ্ধ।

তুমি হও ধ্বনি
আমরা প্রতিধ্বনি।

তুমি ডাকছ আমাদের এখনই এসোনা।
আমরা কিভাবে কেন ফিরবনা?

ষাট

প্রেমিকেরা তাদের ক্ষণিকের আনন্দে
দুই জগতকে জুয়ায় উড়িয়ে দেয়,

একশো বছরের মূল্যের কাজকে
এক সূযোগেই বিসর্জন দেয়।

বহু ধৈর্যের বিকাশ গড়ে ওঠে
মুহূর্তের ফুল হয়ে ফোটার জন্য।

এক হাজার অর্ধ-ভালোবাসা
ফেলে দেওয়া যায়
একটা গোটা হৃদয়ের জন্য।

★★★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here