বাঙালির মৎস্য পুরাণ (চতুর্থ পর্ব)ঃ ছবি ও লেখা –রাকেশ সিংহদেব

0
350
প্রকৃতি প্রেমের আরেক নাম।ভালোবাসার কোনও বাটখারা হয় না তা লেখকের সাথে না যাপন করলে বোঝা বড্ড দায়।মূলত রাকেশ একজন ছবিওয়ালা।আর তার চর্চার আধার সেই সব অবলা জীবজন্তু পশু পাখি।নিয়মিত লেখেন বিভিন্ন বানিজ্যিক পত্রিকায়।এই মুহূর্তে কাজ করছেন হাতি নিয়ে।বিভিন্ন “পরিবেশ বাঁচাও” সংস্থার সাথে জড়িয়ে ফেলেও তিনি নিরঙ্কুশ।একক।তিনি জানেন ভালোবাসতে ফেরৎ পেতে নয়।ইনি বাইফোকালিজমেরও অন্যতম সদস্য।

বাঙালির মৎস্য পুরাণ (চতুর্থ পর্ব)ঃ

বক মাছের গপ্পো


এই মাছও যেন কবি সুকুমার রায়ের ব্যাকরণ না মানা ‘খিচুড়ি’ সংস্করণ! মাছ, কিন্তু বকের মত লম্বা মুখের জন্য নামের ঘাড়ে জুড়ে বসেছে পাখি। মিষ্টি জলের মাছ হয়েও তাই নিজের রূপে স্বতন্ত্র এই মাছ। বক মাছের শরীর লম্বা এবং দুপাশে কিছুটা চাপা। চোয়াল লম্বা হয়ে চঞ্চুর মতো আকৃতি ধারণ করে। নিচের চোয়াল উপরের চোয়াল থেকে সামান্য লম্বা এবং উভয় চোয়ালে ধারালো ছোট ছোত দাঁত থাকে। শরীরের রং রূপালি-সবুজ। পিঠের দিকে গাঢ় এবং পেটের দিকে হালকা। পিঠের পাখনা এবং পুচ্ছদেশীয় পাখনা লেজের কাছাকাছি অবস্থিত। পার্শ্বীয় রেখা স্পষ্ট এবং সম্পূর্ণ। পুরুষ ও স্ত্রী মাছের মাঝে পার্থক্য করা সম্ভব। পুরুষ মাছের পিঠের ও পুচ্ছদেশের পাখনার কিনারা সাধারণত কালো থাকে। লম্বায় এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম: Xenentodon cancila। স্থানীয়ভাবে এদের বিভিন্ন নাম রয়েছে কাঁকলেশ, কাঁকলে, বগো, দু ঠোঁটো, বকমাছ, গাঙধাড়া (পূর্ব মেদিনীপুর), কাঁশকেল (২৪ পরগনা) কাকিলা, কাইল্যা (বাংলাদেশ)।

বক মাছ

বক মাছ মাংসাশী শিকারি মাছ। এরা জলজ পোকামাকড়, ছোট মাছ, এমনকি কখনো কখনো ব্যাঙও খায়।
এদেরকে পুকুর, খনাখন্দ, নদী, বিল, ঝিল, খাল, হাওর, বাওরে পাওয়ার যায়। নদী-নালা থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে ধরা হয়। বিভিন্ন জলাশয় থেকে কাকিলা মাছ বা বক মাছ ধরার আলাদা পদ্ধতি আছে। জলের উপরে বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ অথবা গাছের পাতা-লতা জড়ো করা হয়। বক মাছের ঝাক সেই জড়ো করা স্তুপের উপরে লাফিয়ে পড়ে এবং জেলেরা তা সংগ্রহ করে। বক মাছ তাজা অথবা শুটকি উভয় ভাবেই বাজারজাত করা হয়ে থাকে। অনেকে খেতে পছন্দ করেন। তবে স্বাদে তুলনামূলক ভালো না হওয়ার কারণে চাহিদা কম। বাজারে অ্যাকোয়ারিয়াম এর ওরনামেন্টাল ফিস হিসেবে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আবাসস্থল নষ্ট, অবৈধ মাছ ধরার সরঞ্জাম ব্যবহার করে মৎস্য আহরণের ফলে বর্তমানে এই মাছ ক্রমশ দুর্লভ দর্শন হয়ে উঠেছে। আমাদের রাজ্যের অধিকাংশ স্বাদুজলের নদ নদী, পুকুর নালা, খাল বিল নগরায়নের কবলে পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বা বিভিন্ন ভাবে উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে এই বক মাছের সংখ্যা দ্রুত কমে আসছে। মেদিনীপুর সংলগ্ন কংসাবতী, শীলাবতী, সুবর্ণরেখা সহ অন্যান্য ছোট বড় নদ-নদীগুলো শিল্পবর্জ্য এবং কীটনাশকের মারাত্মক দূষণের প্রভাবে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এই মাছ।

★★★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here