তাপস কুমার দত্ত-র কবিতাগুচ্ছ

0
83
তাপস কুমার দত্ত মূলত গল্পকার তবে কবিতার প্রতি তাঁর টান পাঠককে বারবার টেনেছে।ইনি একজন লিটল ম্যাগাজিন কর্মীও।লিখেছেন নাটক ও উপন্যাস।তাঁর লেখা নাটক মঞ্চস্থও হয়েছে অনেক।তাঁর উপন্যাস চন্দ্র গোধুলি একটি নিজস্বতার ছাপ রাখে।”পাঞ্চজন্য”-নামক একটি অসামান্য সংকলন রয়েছে তাঁ ঝুলিতে।ইনিও বাইফোকালিজমের একজন বিশিষ্ট সদস্য।

তাপস কুমার দত্ত-র কবিতাগুচ্ছ

মৃতজন্ম

দেখছি মিছিল অবাক চোখে
নিঃশব্দে মৃত্যু হাঁটে
শোক জলে আজ খুঁজছি আয়ূ
বন্ধ ঘরের খাঁচায় বসে ।

এক পৃথিবী এক জানালায়
সব ভাষা ভাষী এক সীমানায়
কেবা বড় ছিলো,কেবা হলো ছোটো
এক ই কান্না আঁধারে সমান ।

ধর্মা ধর্ম নয়, সবাই মানুষ
সেই যে কবে শুনেছিলাম
আজ দেখছি হুঁশ ফিরছে
যেন,এই স্বর্গে সবাই সমান ।

ক্ষুধার্ত শিশু সাইরেন ভুলে
শ্বাস নেয় জোরে জোরে
কাল রাতে ওরা, মরা মাকে নিয়ে গেছে
দরজায় তালা মেরে ।

থমথমে মুখে হাঁটছে দেখ
পরিযায়ী নাম নিয়ে
কোনটা বিদেশ কোনটা যে দেশ
কাঁদছে আত্মজনে ।

দম্ভ যুদ্ধে করি হানাহানি
অতিমারি করে নৃত্য
গুনছে মাসুল বিশ্বজুড়ে
ছাড় পায় না প্রাচ্য,না পাশ্চাত্য ।

ধর্ম অধর্ম

এসাে আত্মারা আমার প্রতিবিম্ব হও
আমি সন্তানহন্তা হতে চাই!
এসাে স্বার্থপরের দল, আমার পদলেহন করো
আর যত ধর্ষণকারী, ষড়যন্ত্রকারী, সমাজবিরােধী এসাে তােমরা দলে দলে, বারুদের স্তুপ গড়ে তুলি।হাহাকারের মশাল জ্বালিয়ে দাও
অসহায় পঙ্গু সমাজের উঠোনে উঠোনে,
তবুও তােমরা আমায় প্রতিষ্ঠা করাে!
বিনিময়ে আমি এত কিছু দেব
কী আম জনতা, কী ভাবছাে ?
কী পেয়েছে, কী দিয়েছে, হিসাব কোষছে
মিলবে না, প্রয়ােজনে এক এক করে বলি দেব তােমাদের।
বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে ভরে, প্রাণবায়ু নিংড়ে নেব ন্যায়দণ্ড ধারীদের।
মায়ের বুক থেকে ছিনিয়ে নেব তার সন্তান, বিষিয়ে দেব সমাজের জল, আলাে, বাতাস।

হাতে ধরিয়ে দেব বুলেট, রাইফেল, মাস্কেট, দাপিয়ে বেড়াবে -কী চাই আর ?
এই জনপদ শ্মশান করাে, জন্ম দাও সাহারা মরুভূমির।
তবুও তােমরা আমায় প্রতিষ্ঠা করাে যেও না আত্মার প্রতিবিম্ব হতে, সমাজের ন্যায়দণ্ড হাতে
এসাে তােমরা দলে দলে, রক্তমাখা চরণ তলে।

আঁধারে গিয়েছে মিশে

যন্ত্রণা দিয়ে মৃত্যু লিখছি ছায়ায়
হাতছানি আজও জীবন বৃষ্টি খাতায়
তােমার ডানায় প্রেমের গন্ধ হাসে
মেঘের পিঠে আমার স্বপ্ন ভাসে।

হয়ত এবার ছাই-এর ধোঁয়ায় খেলা
সাজিয়ে চিতা সানাই এর স্রোতে ভেলা
প্রেম বিনিময় দৃষ্টি দিয়েছি মিলে
বাতাস তােমার বন্ধন দিয়েছে খুলে।

এবার তুমি গােধূলির রং মাখো
চাঁদ ছাড়িয়ে আলােক বর্ষে হাঁটো
দিন রাতের এই ঘূর্ণি মেলার শেষে।
শুধু , তুমি আমি আঁধারে গিয়েছি মিশে।

আহুতি

জ্বলন্ত শলাকায় উষ্ণতা মাপি
দহনে আহুতি পাপ
চিতার ভস্মে প্রাণ হাসে হায়
পঞ্চভূতের বিছানায়
বিলীন ধোঁয়ায় ইচ্ছেরা কাঁদে
শরীর হারিয়ে হাওয়া
শুধু আমি তুমি, স্বপ্ন খুঁজেছি
মিথ্যের খেয়া বাওয়া
হারিয়ে হারিয়ে শূন্য পথে
মুঠো মুঠো রােদ আঁচলের খুঁটে
হাতছানি তাই ফিরে ফিরে চাই
স্বপ্ন গিয়েছে মরে
শুধু আমি তুমি, স্বপ্ন খুঁজেছি
আলােকবর্ষ দুরে…

ইচ্ছের সাথী

আমার সব ইচ্ছে গুলােকে
একটা একটা করে হত্যা করে
চিতায় সাজিয়ে দিলাম।
বাতাস নির্বাক দৃষ্টি দিয়ে, ইচ্ছে গুলােকে
ভাসিয়ে নিয়ে গেল দূরে বহুদূরে।
কান্না নেমে এলাে, শব্দের দামামা হাতে
দাও মুক্তি দাও, দাও প্রান দাও,
আমরা চাই না, ধোঁয়ার মাঝে পথ হারাতে
আমরা চাই না, স্বপ্ন শূন্য হতে।
আমরা চাই প্রান পূর্ন হতে
চাই তােমার হৃদয়ের স্রোতস্বিনী হতে
চাই তােমার হৃদয়ের ইচ্ছের সাথী হতে।

প্রতীক্ষা

সব স্বপ্নের সমাধি
নীরব আঁধার
গুমরে মরে অলীক আত্মগ্লানি।
সময় থেমেছে
ভেঙে যাওয়া ঝাড় লণ্ঠনে,
কাজল লতায়
ভেজা বৃষ্টির দাগ।
আবছা আলােয়
সে তােমার অবয়ব,
ওই ক্লান্ত চোখের তারায়
শুধু ভাষার ব্যাকুলতা,
প্রতীক্ষা আছে আজও
শুধু তােমার ফেরার…

★★★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here